নটীর পূজা

মল্লিকা। কিন্তু আজ যে ও ভিক্ষুণী।

রত্নাবলী। মন্ত্র পড়ে কি রক্ত বদল হয়?

মল্লিকা। আজকাল তো দেখছি মন্ত্রের বদল রক্তের বদলের চেয়ে ঢের বড়ো।

রত্নাবলী। রেখে দে ও-সব কথা। প্রজারা উত্তেজিত হয়েছে বলে রাজার ভাবনা! এ আমি সইতে পারিনে। তোমার ভিক্ষুধর্ম রাজধর্মকে নষ্ট করছে।

মল্লিকা। উত্তেজনার আরও একটু কারণ আছে। মহারাজ বিম্বিসার পূজার জন্য যাত্রা করে বেরিয়েছেন কিন্তু এখনো পৌঁছননি, প্রজারা সন্দেহ করছে।

রত্নাবলী। কানাকানি চলছে আমিও শুনেছি। ব্যাপারটা ভালো নয় তা মানি। কিন্তু কর্মফলের মূর্তি হাতে হাতে দেখা গেল।

মল্লিকা। কী কর্মফল দেখলে?

রত্নাবলী। মহারাজ বিম্বিসার পিতার বৈদিক ধর্মকে বিনাশ করেছেন। সে কি পিতৃহত্যার চেয়ে বেশি নয়? ব্রাহ্মণরা তো তখন থেকেই বলছে যে-যজ্ঞের আগুন উনি নিবিয়েছেন, সেই ক্ষুধিত আগুন একদিন ওঁকে খাবে।

মল্লিকা। চুপ চুপ, আস্তে। জান তো, অভিশাপের ভয়ে উনি কী রকম অবসন্ন হয়ে পড়েছেন।

রত্নাবলী। কার অভিশাপ?

মল্লিকা। বুদ্ধের। মনে মনে মহারাজ ওঁকে ভারি ভয় করেন।

রত্নাবলী। বুদ্ধ তো কাউকে অভিশাপ দেন না। অভিশাপ দিতে জানে দেবদত্ত।

মল্লিকা। তাই তার এত মান। দয়ালু দেবতাকে মানুষ মুখের কথায় ফাঁকি দেয়, হিংসালু দেবতাকে দেয় দামি অর্ঘ্য।

রত্নাবলী। যে-দেবতা হিংসা করতে জানে না, তাকে উপবাসী থাকতে হয়, নখদন্তহীন বৃদ্ধ সিংহের মতো।

মল্লিকা। যাই হোক এই বলে যাচ্ছি, আজ সন্ধ্যাবেলায় ওই অশোকচৈত্যে পুজো হবেই।

রত্নাবলী। তা হয় হোক, কিন্তু নাচ তার আগেই হবে এও আমি বলে দিচ্ছি।

[ মল্লিকার প্রস্থান
বাসবীর প্রবেশ

বাসবী। প্রস্তুত হয়ে এলেম।

রত্নাবলী। কিসের জন্যে?

বাসবী। শোধ তুলব বলে। অনেক লজ্জা দিয়েছে ওই নটী।

রত্নাবলী। উপদেশ দিয়ে?

বাসবী। না, ভক্তি করিয়ে।

রত্নাবলী। তাই ছুরি হাতে এসেছ?

বাসবী। সেজন্যে না। রাষ্ট্রবিপ্লবের আশঙ্কা ঘটেছে। বিপদে পড়ি তো নিরস্ত্র মরব না।

রত্নাবলী। নটীর উপর শোধ তুলবে কী দিয়ে?

বাসবী। (হার দেখাইয়া) এই হার দিয়ে।

রত্নাবলী। তোমার হীরের হার!

বাসবী। বহুমূল্য অবমাননা, রাজকুলের উপযুক্ত। ও নাচবে ওর গায়ে পুরস্কার ছুঁড়ে ফেলে দেব।