প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
|
![]() |
ইংলণ্ড, আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বৈভববিলাসের বিপন্নতা ও বীভৎস ব্যাপার দেখাইয়া বিবি বেসেন্ট আমাদিগকে পাশ্চাত্য জড়বাদের আপাতমনোহর এবং অত্যন্ত মোহকর আদর্শ পরিবর্জনপূর্বক ভারতীয় প্রাচীনকাল-প্রবর্তিত অধ্যাত্মপথ অনুসরণ করিতে উপদেশ দিয়াছেন। সদুপদেশ সন্দেহ নাই। কিন্তু ভারতবর্ষের ন্যায় পুণ্য দেশেও একেবারে পঞ্চবিংশতি কোটি মহামুনির উদ্ভব সম্ভবপর নহে। যথাসম্ভব লোক আধ্যাত্মিক হইয়াও যথেষ্ট পরিমাণে পার্থিব লোক বাকি থাকিবে। তাহারা যাহাতে আত্মসম্ভ্রম, উন্নতি এবং মনুষ্যত্ব লাভ করিতে পারে সেজন্য চেষ্টা করা আবশ্যক; যাঁহারা না আধ্যাত্মিক না পার্থিব তাঁহাদের মতো শোচনীয় জীব জগতে আর নাই।
পাশ্চাত্যের পাপাদর্শ অতি সাবধানেই পরিবর্জনীয়। কিন্তু পুণ্যাদর্শও যদি সেখানে পাই, তাহা পরিত্যাগ করিব কেন? মিঃ ওয়েব আইরিশম্যান। আইরিশে-ইংরেজে স্বার্থ ও রাজনৈতিক স্বত্বাধিকার সম্বন্ধটা যে খুব সুমিষ্ট তাহা নহে। সকলেই জানেন যে সম্বন্ধ তীব্র তিক্তরসমিশ্রিত। এতাদৃশ অবস্থায় মিঃ ওয়েব আইরিশ ‘হোমরুলার’ হইয়াও, ইংরাজের একটি অতি মহৎ স্বরূপের আদর্শ আমাদের সম্মুখে ধরিয়াছিলেন। তাঁহার উক্তি এই—
‘ইংরাজেরা অন্যান্য জাতি অপেক্ষা স্বভাবত অধিকতর সাহসীও নয়, সৎ ও শক্তিশালীও নয়। তাহাদের আত্মনির্ভরতা ও কর্তব্যজ্ঞানের উচ্চতা হইতেই, তাহাদের বিজয়কীর্তি ও কার্য-সফলতা অংশত উদ্ভূত। তাহারা যাহা সংকল্প করে, নিশ্চয়ই তাহা সিদ্ধ করে। অন্যান্য লোকের ন্যায়, তাহারাও স্বার্থপ্রণোদিত হইয়া কার্যে প্রবৃত্ত হয়; কিন্তু, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হউক কিংবা রাজ্যশাসন ব্যাপারেই হউক; যখন তাহারা সাধারণের হিতসাধন সংকল্প করিয়া কার্যে প্রবৃত্ত হইল, তখন তাহারা কোনো ক্রমেই ব্যক্তিগত স্বার্থের বশবর্তী হইয়া সে সংকল্প সাধনে বিরত হইবে না; সে কার্য সম্পাদনে কিছুতেই শৈথিল্য করিবে না; ইহা নিশ্চয়। এবং ইহাও নিশ্চয় যে, তাহারা পরস্পরে পরস্পরকে বিশ্বাস করিতে জানে। অতএব এই-সকল বিষয়ে ইংরাজ-গুণের আদর্শ আমাদের গ্রহণীয়।’
এ দেশীয়দিগের বিশেষত এ দেশে অধুনা যাঁহারা রাজনৈতিক ব্যাপারে সংলিপ্ত, ও রাজ-প্রদত্ত আংশিক আত্ম-শাসনাধিকার ব্যপদেশে সাধারণ জনসাধারণের কার্য সম্পাদনে নিযুক্ত তাঁহাদের আপাতত যত কিছু শিক্ষণীয় আছে তাহার মধ্যে উপরোক্ত শিক্ষা সর্বপ্রধান স্থানীয়। জনসাধারণের কার্যে অক্ষুণ্ন ও আন্তরিক মনঃসংযোগ শম এবং অনুরাগ এবং তাহা সম্পাদনকালে আত্মস্বার্থের বা আত্মীয়স্বজনের ব্যক্তিগত বিরোধী স্বার্থের বশবর্তী হইয়া সর্বসাধারণের স্বার্থ বিনষ্ট না করা, উপস্থিত ক্ষেত্রে আমাদের এই দুইটি শিক্ষা অতিশয় আবশ্যক হইয়াছে। কাউন্সিলের মেম্বর, মিউনিসিপাল কমিশনর, ডিস্ট্রিক্ট ও লোকালবোর্ডের সদস্য হইতে গ্রাম্য চৌকিদারি সমিতির পঞ্চায়েতদিগের পর্যন্ত অল্পাধিক পরিমাণে ওই দুই শিক্ষার প্রয়োজন। পরন্তু নগরবাসী ও গ্রাম্য লোকদিগেরও এ শিক্ষা সম্বন্ধে উদাসীন থাকা উচিত নয়। ইহাই স্বায়ত্তশাসনাধিকারের অস্থিমজ্জা প্রাণ। এই শিক্ষার অভাবে, বলিতে লজ্জার ও ঘৃণার উদ্রেক হয়,