শান্তিনিকেতন ১৩

                        নিদ্রা নাহি চক্ষে তব,

                        আমিই কেন ঘুমিয়ে রব!

                        বিশ্ব তোমার বিরাট গেহ,

                            আমিও বিশ্বে লীন।

ভোগের সুখ তো আমি চাই নে– যারা দাসী তাদের সেই সুখের বেতন দিয়ো। আমি যে তোমার পত্নী; আমি তোমার বিশ্বের সমস্ত দুঃখের ভার তোমার সঙ্গে বহন করব। সেই দুঃখের ভিতর দিয়েই সেই দুঃখকে উত্তীর্ণ হব। আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ অখণ্ড মিলনে সম্পূর্ণ হবে। সেইজন্যেই, আমি বলছি নে আমাকে সুখ দাও, আমি বলছি : আবিরাবীর্ম এধি। হে প্রকাশ, আমার মধ্যে তুমি প্রকাশিত হও।–

                        আমি তোমার ধর্মপত্নী,

                                ভোগের দাসী নহি।

                        আমার কাছে লাজ কী স্বামী,

                                নিষ্কপটে কহি–

                        আমায়, প্রভু, দেখাইয়ো না

                                সুখের প্রলোভন।

                        তোমার সাথে দুঃখ বহি

                                সেই তো পরম ধন।

                        ভোগের দাসী তোমার নহি–

                                তাই তো ভুলাও নাকো,

                        মিথ্যা সুখে মিথ্যা মানে

                                দূরে ফেলাও নাকো।

                        পতিব্রতা সতী আমি,

                                তাই তো তোমার ঘরে

                        হে ভিখারি, সব দারিদ্র্য

                                আমার সেবা করে।

                        সুখের ভৃত্য নই তব, তাই

                                পাই না সুখের দান–

                        আমি তোমার প্রেমের পত্নী

                                এই তো আমার মান।

মানুষ যখন প্রকাশের সম্পূর্ণতাকে চাবার জন্যে সচেতন হয়ে জাগ্রত হয়ে ওঠে তখন সে সুখকে সুখই বলে না। তখন সে বলে : যো বৈ ভূমা তৎ সুখং। যা ভূমা তাই সুখ। আপনার মধ্যে যখন সে ভূমাকে চায় তখন আর আরামকে চাইলে চলবে না, স্বার্থকে চাইলে চলবে না, তখন আর কোণে লুকোবার জো নেই, তখন কেবল আপনার হৃদয়োচ্ছ্বাস নিয়ে আপনার আঙিনায় কেঁদে লুটিয়ে বেড়াবার দিন আর থাকে না। তখন নিজের চোখের জল মুছে ফেলে বিশ্বের দুঃখের ভার কাঁধে তুলে নেবার জন্যে প্রস্তুত হতে হবে।