বৈকুন্ঠের খাতা

ঈশান। আমিও তাই বলছিলুম।

বৈকুণ্ঠ। বোধ হয় নীরুমার জন্যে তার মনটা, নীরুকে অবু বড়ো ভালোবাসে—না ঈশেন?

ঈশান। আগে তো তাই বোধ হত, কিন্তু—

বৈকুণ্ঠ। অবিনাশ কি এ-সব জানে?

ঈশান। তা কি আর জানেন না? তিনি যদি এর মধ্যে না থাকতেন, তা হলে কি আর বুড়িটা সাহস করত—

বৈকুণ্ঠ। দেখ্‌ ঈশেন, তোর কথাগুলো বড়ো অসহ্য। তুই একটা মিষ্টিকথা বানিয়েও বলতে পারিস নে? এতটুকু বেলা থেকে আমি তাকে মানুষ করলুম—একদিনের জন্যেও চোখের আড়াল করি নি—আমি চলে গেলে তার কষ্ট হবে না এমন কথা তুই মুখে আনিস হারামজাদা বেটা! সে জেনে শুনে আমার নীরুকে কষ্ট দিয়েছে! লক্ষ্মীছাড়া পাজি, তোর কথা শুনলে বুক ফেটে যায়!

‘ভাবতে পারি নে পরের ভাবনা’ গাহিতে গাহিতে
বিপিনের প্রবেশ

বিপিন। ভেবেছিলুম ফিরে ডাকবে। ডাকে না যে। এই-যে, বুড়ো এইখেনেই আছে।—বৈকুণ্ঠবাবু, আমার জিনিসপত্র নিতে এলুম। আমার ঐ হুঁকোটা আর ঐ ক্যাম্বিসের ব্যাগটা। ঈশেন, শিগগির মুটে ডাকো।

বৈকুন্ঠ। সে কী কথা! আপনি এখানেই থাকুন। আমি করজোড় করে বলছি, আমাকে মাপ করুন বেণীবাবু।

বিপিন। বিপিনবাবু—

বৈকুণ্ঠ। হাঁ হাঁ, বিপিনবাবু। আপনি থাকুন, আমরা এখনই ঘর খালি করে দিচ্ছি।

বিপিন। এই বইগুলো কী হবে?

বৈকুণ্ঠ। সমস্তই সরাচ্ছি।

[শেল্‌ফ হইতে বই ভুমিতে নাবাইতে প্রবৃত্ত

ঈশান। এ বইগুলিকে বাবু যেন বিধবার পুত্রসন্তানের মতো দেখত, ধুলো নিজের হাতে ঝাড়ত, আজ ধুলোয় ফেলে দিচ্ছে!

[ চক্ষু-মোছন

বিপিন। কেদারের ঘরে আফিমের কৌটা ফেলে এসেছি—নিয়ে আসি গে। ‘ভাবতে পারি নে পরের ভাবনা লো সই’।

[ প্রস্থান
তিনকড়ির প্রবেশ

তিনকড়ি। এই-যে পেয়েছি। বৈকুণ্ঠবাবু, ভালো তো?

বৈকুণ্ঠ। কী বাবা, তুমি ভালো আছ? অনেক দিন দেখি নি।

তিনকড়ি। ভয় কী বৈকুণ্ঠবাবু, আবার অনেক দিন দেখতে পাবেন। ধরা দিয়েছি, এখন আপনার খাতাপত্র বের করুন।

বৈকুণ্ঠ। সে-সব আর নেই তিনকড়ি, তুমি এখন নিশ্চিন্ত মনে এখানে থাকতে পারবে।

তিনকড়ি। তা হলে আর লিখবেন না?

বৈকুণ্ঠ। না, সে-সব খেয়াল ছেড়ে দিয়েছি।

তিনকড়ি। ছেড়ে দিয়েছেন, সত্যি বলছেন?

বৈকুণ্ঠ। হাঁ, ছেড়ে দিয়েছি।