হাসির পাথেয়
তখন আমার অল্প বয়স। পিতা আমাকে সঙ্গে করে হিমালয়ে
চলেছেন ড্যালহৌসি পাহাড়ে। সকালবেলায় ডাণ্ডি চ'ড়ে বেরতুম, অপরাহ্নে
ডাকবাংলায় বিশ্রাম হত। আজও মনে আছে এক জায়গায় পথের ধারে
ডান্ডিওয়ালারা ডান্ডি নামিয়েছিল। সেখানে শ্যাওলায় শ্যামল পাথরগুলোর উপর
দিয়ে গুহার ভিতর থেকে ঝরনা নেমে উপত্যকায় কলশব্দে ঝরে পড়ছে। সেই প্রথম -
দেখা ঝরনার রহস্য আমার মনকে প্রবল করে টেনেছিল। এ দিকে ডান
পাশে পাহাড়ের ঢালু গায়ে স্তরে স্তরে শস্যখেত হলদে ফুলে ছাওয়া, দেখে দেখে
তৃপ্তি র শেষ হয় না — কেবলই ভাবি এইগুলো ভ্রমণের লক্ষ্য কেন না
হবে, কেবল ক্ষণিক উপলক্ষ কেন হয়। সেই ঝরনা কোন্ নদীর সঙ্গে মিলে কোথায়
গেছে জানি নে কিন্তু সেই মুহূর্তকালের প্রথম পরিচয়টুকু কখনো ভুলব না।
হিমালয় গিরিপথ চলেছিনু কবে বাল্যকালে
মনে পড়ে। ধূর্জটির তান্ডবের ডম্বরুর তালে
যেন গিরি-পিছে গিরি উঠিছে নামিছে বারে বারে
তমোঘন অরণ্যের তল হতে মেঘের মাঝারে
ধরার ইঙ্গিত যেথা স্তদ্ধ রহে শূন্যে অবলীন,
তুষারনিরুদ্ধ বাণী, বর্ণহীন বর্ণনাবিহীন।
সেদিন বৈশাখমাস, খন্ড খন্ড শস্যক্ষেত্রস্তরে
রৌদ্রবর্ণ ফুল ; মেঘের কোমল ছায়া তারি 'পরে
যেন স্নিগ্ধ আকাশের ক্ষণে ক্ষণে নীচে নেমে এসে
ধরণীর কানে কানে প্রশংসার বাক্য ভালোবেসে।
সেইদিন দেখেছিনু নিবিড় বিস্ময়মুগ্ধ চোখে
চঞ্চল নির্ঝরধারা গুহা হতে বাহিরি আলোকে
আপনাতে আপনি চকিত, যেন কবি বাল্মীকির
উচ্ছ্বসিত অনুষ্টুভ। স্বর্গে যেন সুরসুন্দরীর
প্রথম যৌবনোল্লাস, নূপুরের প্রথম ঝংকার,
আপনার পরিচয়ে নিঃসীম বিস্ময় আপনার,
আপনারি রহস্যের পিছে পিছে উৎসুক চরণে
অশ্রান্ত সন্ধান। সেই ছবিখানি রহিল স্মরণে
চিরদিন মনোমাঝে।
সেদিনের যাত্রাপথে হতে
আসিয়াছি বহুদুরে ; আজি ক্লান্ত জীবনের স্রোতে