প্রত্যাগত

দূরে গিয়েছিলে চলি, বসন্তের আনন্দভাণ্ডার

তখনো হয় নি নিঃস্ব ; আমার বরণপুষ্পহার

তখনো অম্লান ছিল ললাটে তোমার। হে অধীর,

কোন্‌ অলিখিত লিপি দক্ষিণের উদ্‌ভ্রান্ত সমীর

এনেছিল চিত্তে তব। তুমি গেলে বাঁশি লয়ে হাতে,

ফিরে দেখ নাই চেয়ে আমি বসে আপন বীণাতে

বাঁধিতেছিলাম সুর গুঞ্জরিয়া বসন্তপঞ্চমে,

আমার অঙ্গনতলে আলো আর ছায়ার সংগমে

কম্পমান আম্রতরু করেছিল চাঞ্চল্য বিস্তার

সৌরভবিহ্বল শুক্লরাতে। সেই কুঞ্জগৃহদ্বার

এতকাল মুক্ত ছিল। প্রতিদিন মোর দেহলিতে

আঁকিয়াছি আলিপনা। প্রতিসন্ধ্যা বরণডালিতে

গন্ধতৈলে জ্বালায়েছি দীপ। আজি কতকাল পরে

যাত্রা তব হল অবসান। হেথা ফিরিবার তরে

হেথা হতে গিয়েছিলে। হে পথিক, ছিল এ লিখন —

আমারে আড়াল করে আমারে করিবে অন্বেষণ ;

সুদূরের পথ দিয়ে নিকটেরে লাভ করিবারে

আহ্বান লভিয়াছিলে সখা। আমার প্রাঙ্গণদ্বারে

যে পথ করিলে শুরু সে পথের এখানেই শেষ।

হে বন্ধু, কোরো না লজ্জা, মোর মনে নাই ক্ষোভলেশ,

নাই অভিমানতাপ। করিব না ভর্ৎসনা তোমায় ;

গভীর বিচ্ছেদ আজি ভরিয়াছি অসীম ক্ষমায়।

আমি আজি নবতর বধূ, আজি শুভদৃষ্টি তব

বিরহগুণ্ঠনতলে দেখে যেন মোরে অভিনব

অপূর্ব আনন্দরূপে, আজি যেন সকল সন্ধান

প্রভাতে নক্ষত্রসম শুভ্রতায় লভে অবসান।

আজি বাজিবে না বাঁশি, জ্বলিবে না প্রদীপের মালা,

পরিব না রক্তাম্বর ; আজিকার উৎসব নিরালা

সর্ব-আভরণহীন। আকাশেতে প্রতিপদ-চাঁদ

কৃষ্ণপক্ষ পার হয়ে পূর্ণতার প্রথম প্রসাদ

লভিয়াছে। দিক্‌প্রান্তে তারি ওই ক্ষীণ নম্র কলা

নীরবে বলুক আজি আমাদের সব কথা বলা।