রাজরানী

মেয়েটি বললে, আছেন আমার বুড়ো বাপ, বনের বাইরে তাঁর কুঁড়েঘর। আমি ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই। কাজ শেষ করে কিছু খাবার নিয়ে যাই তাঁর কাছে। আমার জন্য তিনি পথ চেয়ে আছেন।

রাজা বললেন, তুমি অন্ন নিয়ে চলো, আর আমাকে দেখিয়ে দাও সেইসব ফলমূল যা তুমি নিজে জড়ো করে খাও।

কন্যা বললে, আমার যে অপরাধ হবে।

রাজা বললেন, তুমি দেবতার আশীর্বাদ পাবে। তোমার কোনো ভয় নেই। আমাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলো।

বাপের জন্য তৈরি অন্নের থালি সে মাথায় নিয়ে চলল। ফলমূল সংগ্রহ করে দুজনে তাই খেয়ে নিলে। রাজা গিয়ে দেখলেন, বুড়ো বাপ কুঁড়েঘরের দরোজায় বসে।

সে বললে, মা, আজ দেরি হল কেন।

কন্যা বললে, বাবা, অতিথি এনেছি তোমার ঘরে।

বৃদ্ধ ব্যস্ত হয়ে বললে, আমার গরিবের ঘর, কী দিয়ে আমি অতিথিসেবা করব।

রাজা বললেন, আমি তো আর কিছুই চাই নে, পেয়েছি তোমার কন্যার হাতের সেবা। আজ আমি বিদায় নিলেম। আর-একদিন আসব।

সাত দিন সাত রাত্রি চলে গেল, এবার রাজা এলেন রাজবেশে। তাঁর অশ্ব রথ সমস্ত রইল বনের বাহিরে। বৃদ্ধের পায়ের কাছে মাথা রেখে প্রণাম করলেন; বললেন, আমি বিজয়পত্তনের রাজা। রানী খুঁজতে বেরিয়েছিলাম দেশে বিদেশে। এতদিন পরে পেয়েছি— যদি তুমি আমায় দান কর, আর যদি কন্যা থাকেন রাজি।

বৃদ্ধের চোখ জলে ভরে গেল। এল রাজহস্তী— কাঠকুড়ানি মেয়েকে পাশে নিয়ে রাজা ফিরে গেলেন রাজধানীতে।

অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গের রাজকন্যারা শুনে বললে, ছি!

                   *
               *    *
আসিল দিয়াড়ি হাতে রাজার ঝিয়ারি
খিড়কির আঙিনায়, নামটি পিয়ারি।
আমি শুধালেম তারে, এসেছ কী লাগি।
সে কহিল চুপে চুপে, কিছু নাহি মাগি।
আমি চাই ভালো ক’রে চিনে রাখো মোরে,
আমার এ আলোটিতে মন লহো ভরে।
আমি যে তোমার দ্বারে করি আসা-যাওয়া,
তাই হেথা বকুলের বনে দেয় হাওয়া।
যখন ফুটিয়া ওঠে যূথী বনময়
আমার আঁচলে আনি তার পরিচয়।
যেথা যত ফুল আছে বনে বনে ফোটে,
আমার পরশ পেলে খুশি হয়ে ওঠে।
শুকতারা ওঠে ভোরে, তুমি থাক একা,