প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
দেবীর আদেশ, আর-কাউকে সঙ্গে নেওয়া নিষেধ।
ওরা বনের বাইরে গিয়ে পৌঁছল, তখন রাত্রি প্রায় হয়েছে ভোর। চন্দনী অরিজিৎকে প্রণাম করে বললে, আপনার আর ভয় নেই। এই আমার কঙ্কণ, নিয়ে যান, দরকার হলে পথের মধ্যে কাজে লাগতে পারে।
অরিজিৎ চললেন দূরপথে। নানা বিঘ্ন কাটিয়ে যতই দিন যাচ্ছে ভয় হতে লাগল, সময়মতো হয়তো পৌঁছতে পারবেন না। বহুকষ্টে করঞ্জর রাজ্যের যখন কাছাকাছি গিয়েছেন খবর পেলেন, যুদ্ধের ফল ভালো নয়। দুর্গ বাঁচাতে পারবে না। আজ হোক, কাল হোক, মুসলমানেরা দখল করে নিতে পারবে, তাতে সন্দেহ নেই। অরিজিৎ আহারনিদ্রা ছেড়ে প্রাণপণে ঘোড়া ছুটিয়ে যখন দুর্গের কাছাকাছি গিয়েছেন, দেখলেন, সেখানে আগুন জ্বলে উঠেছে। বুঝলেন মেয়েরা জহরব্রত নিয়েছে। হার হয়েছে তাই সকলে চিতা জ্বালিয়েছে মরবার জন্যে। অরিজিৎ কোনোমতে দুর্গে পৌঁছলেন। তখন সমস্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। মেয়েরা আর কেউ নেই। পুরুষরা তাদের শেষ লড়াই লড়ছে। নির্মলকুমারী রক্ষা পেল কিন্তু সে মৃত্যুর হাতে, তাঁর হাতে নয় এই দুঃখ। তখন মনে পড়ল চন্দনী তাঁকে বলেছিল, তোমার কাজ শেষ হয়ে গেলে পর তোমাকে এখানেই ফিরে আসতে হবে; সেজন্যে, যতদিন হোক, আমি পথ চেয়ে থাকব।
তার পর দুই মাস চলে গেল। ফাল্গুনের শুক্লপক্ষে অরিজিৎ সেই বনের মধ্যে পৌঁছলেন। শাঁখ বেজে উঠল, সানাই বাজল, সবাই পরল নতুন পাগড়ি লাল রঙের, গায়ে ওড়াল বাসন্তীরঙের চাদর। শুভলগ্নে অরিজিতের সঙ্গে চন্দনীর বিবাহ হয়ে গেল।
এই পর্যন্ত হল আমার গল্প। তার পরে বরাবরকার অভ্যাসমতো শোবার ঘরের কেদারায় গিয়ে বসলুম। বাদলার হাওয়া বইছিল। বৃষ্টি হবে-হবে করছে। সুধাকান্ত দেখতে এলেন, দরজা জানালা ঠিকমতো বন্ধ আছে কি না। এসে দেখলেন, আমি কেদারায় বসে আছি। ডাকলেন, কোনো উত্তর নেই। স্পর্শ করে বললেন, ঠাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছে, চলুন বিছানায়।
কোনো সাড়া নেই। তার পরে চৌষট্টি ঘণ্টা কাটল অচেতনে।