চণ্ডালিকা

মা। আনন্দ? ভগবান বুদ্ধের শিষ্য?

প্রকৃতি। হাঁ, সেই ভিক্ষু।

মা। তুই আমার বুক-চেরা ধন, আমার চোখের মণি— তোর কথাতেই এতবড়ো পাপে হাত দিচ্ছি।

প্রকৃতি। কিসের পাপ! যিনি সবাইকে কাছে আনেন তাঁকে কাছে আনব, তাতে দোষ হয়েছে কী।

মা। ওঁরা পুণ্যের জোরে টেনে আনেন মানুষকে। আমরা মন্তর পড়ে টানি, পশুকে টানে যে-ফাঁসে। আমরা মথন করে তুলি পাঁক।

প্রকৃতি। ভালোই সে ভালোই, নইলে পঙ্কোদ্ধার হয় না।

মা। ওগো, তুমি মহাপুরুষ, অপরাধ করবার শক্তি আমার যত, ক্ষমা করবার শক্তি তোমার তার চেয়ে অনেক বেশি। প্রভু, অসম্মান করতে বসেছি, তবু প্রণাম গ্রহণ করো।

প্রকৃতি। কিসের ভয় তোমার, মা! মন্ত্র আমিই পড়ছি মায়ের মুখ দিয়ে। আমার বেদনা যদি আনে তাঁকে টেনে, আর তাই যদি হয় অপরাধ, তবে করবই অপরাধ, করবই। যে-বিধানে কেবল শাস্তিই আছে, সান্ত্বনা নেই, মানব না সে বিধানকে।

গান

    দোষী করো, দোষী করো।

      ধুলায়-পড়া ম্লান কুসুম

        পায়ের তলায় ধরো।

      অপরাধে-ভরা ডালি

      নিজ হাতে করো খালি,

তার পরে সেই শূন্য ডালায়

      তোমার করুণা ভরো।

তুমি উচ্চ, আমি তুচ্ছ—

  ধরব তোমায় ফাঁদে

      আমার অপরাধে।

   আমার দোষকে তোমার পুণ্য

   করবে তো কলঙ্কশূন্য,

 ক্ষমায় গেঁথে সকল ত্রুটি

      গলায় তোমার পরো॥

মা। আচ্ছা সাহস তোর প্রকৃতি!

প্রকৃতি। আমার সাহস! ভেবে দেখ্‌ তাঁর সাহসের জোর! কেউ যে-কথা আমার কাছে বলতে পারে নি তিনি সহজেই বললেন, জল দাও। ঐটুকু বাণী, তার তেজ কত— আলো ক’রে দিলে আমার সমস্ত জন্ম; বুকের উপরে কালো পাথরটা চিরকাল চাপা ছিল, দিলে সেটাকে ঠেলে, উছলে উঠল রসের ধারা। মিথ্যে তোর ভয়, তুই যে তাঁকে দেখিস নি। সমস্ত সকাল বেলা ভিক্ষা করলেন শ্রাবস্তীনগরে; এলেন মাঠ পেরিয়ে শ্মশান পেরিয়ে, নদীর তীর বেয়ে, প্রখর রৌদ্র মাথায় করে। কিসের জন্যে। আমার মতো মেয়েকেও