চণ্ডালিকা

আবার আসুক, আবার আসুক, আসুক ফিরে।

      রেখে দেব আসন পেতে

         হৃদয়েতে,

    পথের ধুলো ভিজিয়ে দেব অশ্রুনীরে।

       যায় যদি যাক শৈলশিরে।

      আসুক ফিরে, আসুক ফিরে।

       লুকিয়ে রব গিরিগুহায়,

         ডাকব উহায়—

    আমার স্বপন ওর জাগরণ রইবে ঘিরে॥

আমাকে করলে না দয়া, আমি ওকে দয়া করব না। তোর সব চেয়ে যে নিষ্ঠুর মন্ত্র পড়িস তাই— পাকে পাকে দাগ দিয়ে দিয়ে জড়াক ওর মনকে। যাবে কোথায় আমাকে এড়িয়ে, পারবে কেন।

মা। ভাবনা করিস নে। অসাধ্য হবে না। তোকে দেব মায়াদর্পণ। সেইটি হাতে নিয়ে নাচবি। তার ছায়া পড়বে তাতে। সেই আয়নাতেই দেখতে পাবি কী হল তার, কতদূর সে এল।

প্রকৃতি। ঐ দেখ্, পশ্চিমে জমল মেঘ, ঝড়ের মেঘ। মন্ত্র খাটবে, মা, খাটবে। উড়ে যাবে শুষ্ক সাধন, শুকনো পাতার মতো। নিববে বাতি। পথ দেখা যাবে না। ঘুরে ঘুরে এসে পড়বে এই দরজায়, নিশীথরাতে ঝড়ে বাসাভাঙা পাখি যেমন করে এসে পড়ে অন্ধকার আঙিনায়। বুক দুর‌্‍দুর্ করছে, মনের মধ্যে ঝিলিক দিচ্ছে বিজুলি, ফেনিয়ে ফেনিয়ে ঢেউ উঠছে যে-সমুদ্রে তার পার দেখি নে।

মা। এখনো ভেবে দেখ্‌। মাঝখানে তো আঁৎকে উঠবি নে ভয়ে? ধৈর্য থাকবে তোর? মন্ত্রের বেগ চ’ড়ে যাবে যখন, হঠাৎ ঠেকাতে গেলে আমার প্রাণ বেরিয়ে যাবে। জ্বলবার জিনিস সমস্ত যাবে ছাই হয়ে, তবে নিববে আগুন, এই কথাটা মনে রাখিস।

প্রকৃতি। তুই ডরছিস কার জন্যে। সে কি তেমনি মানুষ। কিছুতে কিছু হবে না তার— শেষ পর্যন্তই আসুক সে চলে, আগুনের পথ মাড়িয়ে মাড়িয়ে। আমি মনের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি, সামনে প্রলয়ের রাত্রি, মিলনের ঝড়, ভাঙনের আনন্দ।

গান

        হৃদয়ে মন্দ্রিল ডমরু গুরুগুরু,

        ঘন মেঘের ভুরু, কুটিল কুঞ্চিত,

হল রোমাঞ্চিত বন বনান্তর;

দুলিল চঞ্চল বক্ষোহিন্দোলে

        মিলনস্বপ্নে সে কোন্‌ অতিথি রে।

সঘন-বর্ষণ-শব্দ-মুখরিত,

বজ্রসচকিত ত্রস্ত শর্বরী,

মালতীবল্লরী কাঁপায় পল্লব

            করুণ কল্লোলে,

        কানন শঙ্কিত ঝিল্লিঝংকৃত॥