উৎসর্গ

            চৈত্রমাসে রৌদ্র বাড়ে, বরফ গলে পড়ে —

            ঝর্নাতলায় বসে মোরা কাঁদি তাহার তরে।

 আজিকে এই তৃষার দিনে                 কোথায় ফিরে নিঝর বিনে,

            শুষ্ক কলস ভরে নিতে কোথায় পাবে ধারা।

           কে জানে সে নিরুদ্দেশে কোথায় হল হারা।

            কোথাও কিছু আছে কি গো, শুধাই যারে তারে —

            আমাদের এই আকাশ - ঢাকা দশ পাহাড়ের পারে।

  

            গ্রীষ্মরাতে বাতায়নে বাতাস হু হু করে,

            বসে আছি প্রদীপ - নেবা তাহার শূন্য ঘরে।

শুনি বসে দ্বারের কাছে                 ঝর্না যেন তারেই যাচে —

            বলে, ‘ ওগো, আজকে তোমার নাই কি কোনো তৃষা।

            জলে তোমার নাই প্রয়োজন, এমন গ্রীষ্মনিশা ? '

            আমিও কেঁদে কেঁদে বলি, ‘ হে অজ্ঞাতচারী ,

           তৃষ্ণা যদি হারাও তবু ভুলো না এই বারি। '

 

           হেনকালে হঠাৎ যেন লাগল চোখে ধাঁধা,

           চারি দিকে চেয়ে   দেখি নাই পাহাড়ের বাধা।

ওই - যে আসে, কারে দেখি —            আমাদের যে ছিল সে কি।

            ওগো, তুমি কেমন আছ, আছ মনের সুখে?

            খোলা আকাশতলে হেথা ঘর কোথা কোন্‌ মুখে?

            নাইকো পাহাড়, কোনোখানে ঝর্না নাহি ঝরে,

            তৃষ্ণা পেলে কোথায় যাবে বারিপানের তরে?

 

            সে কহিল, ‘ যে ঝর্না বয় সেথা মোদের দ্বারে,

            নদী হয়ে সেই চলেছে হেথা উদার ধারে।

 সে আকাশ সেই পাহাড় ছেড়ে              অসীম - পানে গেছে বেড়ে

          সেই ধরারেই নাইকো হেথা পাষাণ - বাঁধা বেঁধে। '

        ‘ সবই আছে, আমরা তো নেই ' কইনু তারে কেঁদে ।

           সে কহিল করুণ হেসে, ‘ আছ হৃদয়মূলে। '

            স্বপন ভেঙে চেয়ে দেখি আছি ঝর্নাকূলে।