পিস্নি
কিশোর-গাঁয়ের পুবের পাড়ায় বাড়ি
পিস্নি বুড়ি চলেছে গ্রাম ছাড়ি।
একদিন তার আদর ছিল, বয়স ছিল ষোলো,
স্বামী মরতেই বাড়িতে বাস অসহ্য তার হল।
আর-কোনো ঠাঁই হয়তো পাবে আর-কোনো এক বাসা,
মনের মধ্যে আঁকড়ে থাকে অসম্ভবের আশা।
অনেক গেছে ক্ষয় হয়ে তার, সবাই দিল ফাঁকি,
অল্প কিছু রয়েছে তার বাকি।
তাই দিয়ে সে তুলল বেঁধে ছোট্ট বোঝাটাকে,
জড়িয়ে কাঁথা আঁকড়ে নিল কাঁখে।
বাঁ হাতে এক ঝুলি আছে, ঝুলিয়ে নিয়ে চলে,
মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে উঠে বসে ধূলির তলে।
শুধাই যবে, কোন্ দেশেতে যাবে,
মুখে ক্ষণেক চায় সকরুণ ভাবে ;
কয় সে দ্বিধায়, “ কী জানি ভাই, হয়তো আলম্ডাঙা,
হয়তো সান্কিভাঙা,
কিংবা যাব পাটনা হয়ে কাশী। ”
গ্রাম-সুবাদে কোন্কালে সে ছিল যে কার মাসি,
মণিলালের হয় দিদিমা, চুনিলালের মামি —
বলতে বলতে হঠাৎ যে যায় থামি,
স্মরণে কার নাম যে নাহি মেলে।
গভীর নিশাস ফেলে
চুপটি ক ' রে ভাবে,
এমন করে আর কতদিন যাবে
।
দূরদেশে তার আপন জনা, নিজেরই ঝঞ্ঝাটে
তাদের বেলা কাটে।
তারা এখন আর কি মনে রাখে
এতবড়ো অদরকারি তাকে।
চোখে এখন কম দেখে সে, ঝাপসা যে তার মন,
ভগ্নশেষের সংসারে তার শুকনো ফুলের বন।