প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
১৩
চীনে ম্যাজিষ্ট্রেট, কয়েকবার অভিযোগ-শুনানির পরেও হত্যাপরাধে অভিযুক্ত আসামীদলের মধ্যে প্রকৃত কোন্ ব্যক্তি স্বহস্তে সাংঘাতিক আঘাত করিয়াছে তাহা স্থির করিতে না পারিয়া, বন্দীদিগকে জানাইলেন যে, তিনি সত্যনির্ণয়ের জন্য অশরীরী সত্তার সাহায্য লইতে যাইতেছেন। তদনুসারে তিনি অপরাধীর কৃষ্ণবেশ পরিহিত ঐ অভিযুক্ত ব্যক্তিদিগকে একটি গোলাবাড়িতে লইয়া গিয়া, দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরাইয়া ঘরের চারি ধারে সন্নিবেশিত করিলেন। শীঘ্রই একজন অভিযোক্তা দিব্যদূত তাহাদের মধ্যে আসিয়া অপরাধীর পৃষ্ঠদেশ চিহ্নিত করিয়া যাইবেন, এই কথা তাহাদিগকে বলিয়া তিনি বাহির হইয়া গেলেন এবং দরজা বন্ধ করাইয়া ঘর অন্ধকার করিয়া দিলেন। অল্পক্ষণ পরে যখন দরজা খুলিয়া দিয়া ঐ লোকগুলিকে বাহিরে আসিতে আহ্বান করা হইল, তখন অবিলম্বেই দেখা গেল যে, তাহাদের মধ্যে একজনের পৃষ্ঠে একটি সাদা চিহ্ন রহিয়াছে। দেওয়ালে সম্প্রতি চুণকাম হইয়াছে, তাহা না জানিয়া ঐ ব্যক্তি সম্পূর্ণরূপে নিজেকে আপদ হইতে বাঁচাইবার ইচ্ছায় দেওয়ালের দিকে পিঠ ফিরাইয়া দাঁড়াইয়াছিল।
১৪
মুসার আইনে এবং প্রথম খৃষ্টীয় যুগে সুদ লওয়ার বিরুদ্ধে অতি বদ্ধমূল আপত্তি ছিল। তখনকার দিনের শিল্প ও উৎপন্ন দ্রব্যাদি অতিশয় সাদাসিধা ধরণের ছিল বলিয়াই প্রতীয়মান হয় এবং তাহাদের নির্ম্মাণের ব্যাপারে ধারে কারাবারের প্রয়োজন ছিল না। যাহা কিছু ধারে নেওয়া হইত, তাহা কেবল সদ্য ব্যবহার এবং দুঃখলাঘব করিবার জন্যই। এই কারণেই এই ধারণার উৎপত্তি হইয়াছিল যে, যে কেহ অপরের দুঃখক্লেশে লাভবান্ হয় সে নিন্দনীয়। এমন কি, গ্রীক্ ও রোমীয় দার্শনিকগণও কোনো সঙ্গত কারণ না দেখাইয়াই উচ্চকণ্ঠে সুদ গ্রহণ করার নিন্দা করিয়াছিলেন। কিন্তু গ্রীক ও রোমীয় আইনে সুদ-গ্রহণে সম্মতি দেওয়া হইয়াছিল, এবং মধ্যযুগ পর্য্যন্ত যতদিন না খৃষ্টীয় সঙ্ঘ ইহার বিরুদ্ধে ধর্ম্মযুদ্ধ ঘোষণা করেন তাবৎকাল ইহা সাধারণতঃ গ্রাহ্যই ছিল।
১৫
ধনুষ্কোডি হইতে যে “থ্রু” প্যাসেঞ্জার ট্রেন মাদ্রাজের অভিমুখে গত কল্য রওনা হইয়াছিল তাহা রাত্রে যথানিয়মে তিরুপুরনম্ পার হইয়াছিল, কিন্তু সেই ষ্টেশনের প্রায় দেড় মাইল দূরে তাহা রেলচ্যুত হয়। প্রকাশ পায় যে কে একজন দুষ্ট অভিপ্রায়ে একখানি ত্রিশ ফুট লম্বা রেল তুলিয়া রাস্তার বাহিরে ফেলিয়া দিয়াছিল এবং তাহার ফলে সমস্ত এঞ্জিনটি সেই ফাঁকের উপর দিয়া চলিয়া গিয়াছিল এবং টেণ্ডর গাড়িটি তাহার অব্যবহিত পশ্চাদ্বর্ত্তী তিনটি থার্ড্ ক্লাস গাড়ি টানিয়া লইয়া লাইনের একেবারে বাহিরে গিয়া পড়িয়াছিল; তাহাদের মধ্যে দুইটি গাড়ি উল্টাইয়া গিয়াছিল এবং তৃতীয়টি অল্প পরিমাণে এক পাশে কাত হইয়াছিল। যাহা হউক ভাগ্যক্রমে রেলওয়ে-কর্ম্মচারী অথবা যাত্রীদের মধ্যে কাহারো কোনো অনিষ্ট ঘটে নাই। ট্রাফিক ইন্স্পেক্টরের জিম্মায় মাদুরা হইতে প্রায় বারোটা দশ মিনিটের সময় তৎক্ষণাৎ একটি রিলীফ ট্রেন চালানো হইয়াছিল এবং প্যাসেঞ্জারদিগকে অন্য গাড়িতে তুলিয়া আজ ভোর-সকালে মাদুরায় আনা হইয়াছে। আশা করা যাইতেছে, আজ সন্ধ্যা নাগাদ অবিচ্ছিন্ন যাতায়াত পুনঃস্থাপিত হইবে।
১৬
প্রায় মধ্যাহ্নে শ্রীনগর ছাড়িলাম এবং নদীর প্রধান ধারাটি বাহিয়া অবাধে ভাসিতে ভাসিতে নগরীর মধ্য দিয়া চলিলাম। অসংখ্য বিপণি, চিত্রার্পিতবৎ সেতুসকল এবং তীরবেগে চতুর্দ্দিকে ধাবমান বহুসংখ্যক ক্ষুদ্র নৌকা চারি দিক হইতে মনোযোগ আকর্ষণ করিতেছিল। সন্ধ্যায় নদীতীরের সাদিপুর-নামক একটি গ্রামে আমরা নৌকা বাঁধিলাম; পরদিন প্রাতে প্রায় ছয়টায় ছাড়িয়া সম্বলে এবং মানসবল সরোবরের প্রবেশমুখে প্রায় বেলা নয়টার সময় পৌঁছিলাম। মাঝিরা ঝড়ঝঞ্ঝার সময়ে এই সরোবরকে বড়ো ভয় করে এবং সাধারণতঃ তাহারা তীরের কাছ ঘুরিয়া মন্দগতিতে যাওয়াই পছন্দ করে। সরোবরের দূরতর প্রান্তে একটি উৎসের নিকট আমরা নৌকা বাঁধিলাম এবং সকল সরোবরের মধ্যে সুন্দরতম এই সরোবরের সর্ব্বোৎকৃষ্ট দৃশ্যটি দেখিতে পাইলাম। ইহার গভীরতাকে যে অতলস্পর্শ