প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
১১৪
জাপানে চাউল-লুণ্ঠন-ঘটিত গুরুতর দাঙ্গায় পর্য্যবসিত যে খাদ্যসমস্যা গত কয়দিনের টেলিগ্রামে বর্ণিত হইয়াছে তাহা নূতন ব্যাপার নহে; কারণ বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি প্রধান আহার্য্য দ্রব্য পাওয়া কঠিন হইয়া উঠিয়াছে। মে মাসের শেষভাগে য়োকোহামার একজন পত্রলেখক তাঁহার লিখিত পত্রে নির্দ্দেশ করিয়াছেন যে, বিদেশী চাউল আমদানী ও সঙ্গত মূল্যে উহার বিক্রয় নিয়ন্ত্রিত করার জন্য জাপান গভর্ণমেন্ট্ কতকগুলি বহুপল্লবিত নিয়মপত্র বাহির করিতে বাধ্য হইয়াছিলেন।
১১৫
তিনি বলিয়াছিলেন সচরাচর জাপানের প্রয়োজনীয় সমস্ত চাউল প্রায় জাপানেই উৎপন্ন হইয়া থাকে, এবং বিদেশী চাউল-সম্বন্ধে বরাবর জাপানের একটি প্রবল বিরুদ্ধ সংস্কার আছে। যাহা হউক ইদানীং জনসংখ্যার বৃদ্ধি-বশত চাউলের খরচ চাউলের জোগানকে অতিক্রম করিয়াছে। তবুও আমদানি করা আহার্য্যদ্রব্যে জাপানের আবশ্যকতা অপেক্ষাকৃত অল্প। কারণ, কোরিয়া ও হোক্কেডোর অনেক স্থান এখনো অনাবাদী পড়িয়া আছে এবং দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়াও জাপানের একটি বৃহৎ শস্যস্থলী। কিন্তু গত কয়েক বৎসর ধরিয়া চাউল-উৎপাদন অপেক্ষা অধিকতর লাভজনক নিষ্কাশনপথে জাপানী শক্তি ধাবিত হইয়াছে।
১১৬
কল্পনা করা যাক, আমাদের পদাতিক সৈন্যের একদল বিশ্রামের জন্য গর্ত্তগড়ের বাহিরে আসিয়াছে। মাটির আঁকাবাঁকা ফাটল বাহিয়া দুই মাইল হাঁটিয়া একটি গ্রামের নিকট তাহারা উপরিতলে পৌঁছিয়াছে। গ্রামের পূর্ব্বদিকের দেওয়াল-কয়টিতে অনেকগুলি ছিদ্র আছে, কিন্তু গ্রামখানির একেবারে ধ্বংস হয় নাই। গ্রামের প্রধান রাস্তায় যখন সৈন্যদল প্রবেশ করিল ঠিক সেই সময় কয়েকটি জার্ম্মান কামান, ঐখানে কোথাও বৃটিশ কামান না থাকা সত্ত্বেও আন্দাজে শেল্ নিক্ষেপ করিয়া গ্রামময় তাহার সন্ধান করিতেছে। আরও অনেক শেল্ গ্রাম ছাড়াইয়া রাস্তার উপর বেশ একটু ঘন ঘন পড়িতেছে। এই রাস্তা ধরিয়াই সৈন্যদলকে এক মাইল দুই মাইল দূরে ভাঙা বাড়ির মাটির তলের কুটুরিতে তাহাদের যথানির্দিষ্ট বাসায় পৌঁছিতে হইবে। গ্রামের রাস্তা গ্রামখানির সম্মুখভাগের সঙ্গে সমান্তরালরেখায় উত্তর হইতে দক্ষিণ পর্য্যন্ত চলিয়া গিয়াছে। যে পর্য্যন্ত না বর্ষণের ঝড় সাঙ্গ হয়, সে পর্য্যন্ত রাস্তার পূর্ব্বদিকে বাড়িগুলির নিরাপদ ভাগে সৈন্যদিগকে লাইন ভঙ্গ করিয়া বিশ্রাম করিবার জন্য দলপতি আদেশ করিলেন।
১১৭
গর্ত্তগড় হইতে যাহারা আসিয়াছে তাহাদের প্রত্যেকেই অত্যন্ত ক্লান্ত। কোনো একটা ছুতায় থামিবার জন্য উৎসুক সৈন্যদল কুটীরের দ্বারবর্ত্তী সিঁড়ির ধাপের উপর হইতে অসৈনিক জীবনযাত্রা নিরীক্ষণ করিয়া, দীর্ঘকাল গর্ত্তগড়ের কর্ত্তব্যে কালযাপনের পর, আমোদ এবং কৌতূহল অনুভব করিতেছে। কুটীরের যে অধিবাসিগণ রাস্তার নিরাপদ অংশে বাস করিতেছে, তাহারা তাহাদের দরজার কাছে আসিয়া সৈন্যদের সঙ্গে নিরুদ্বিগ্নভাবে আলাপ করিতে লাগিল। পনেরো বছর বয়সের মতো চেহারার এক ঊনিশ বছরের বালককে অত্যন্ত শ্রান্ত দেখিয়া একজন স্ত্রীলোক তাহাকে একটু গরম কাফি আনিয়া দিল। বালক কাফির মূল্য দিতে চাওয়ায় স্ত্রীলোকটি হাসিয়া বলিল, “যুদ্ধের পরে, যুদ্ধের পে