অনুবাদ-চর্চা
ঠিক ইহার পরদিনে, এরূপ ঘটনায় সচরাচর যেমন হইয়া থাকে সেইমতোই, আমাদের ঘরে অন্তত বিশ জন লোক রাত্রিভোজনে বসিয়া গিয়াছিল, তাহারা আমাকে তাহাদের সহিত খাইতে বসিতে রাজি করিয়াছিল। তাহারা সকলেই ঘরের মধ্যে আমোদ করিতেছিল। তাহাদের মধ্যে কেহ বা বন্ধুত্ববশত, কেহ বা কৌতূহলবশত, কেহ বা স্বার্থবশত আসিয়াছিল।

১২৭

আমি উহাদের সঙ্গে যোগ দিতে যাইব, এমন সময় আমার স্মরণ হইল যে, আমার মৃত মাতা–এমন মা যিনি সারাজীবন সন্তানদের কল্যাণ ব্যতীত আর কিছু কামনা করেন নাই, পাশের ঘরে, একেবারে পাশের ঘরটিতে পড়িয়া রহিয়াছে। ঘৃণা, শোকের উত্তেজনা, অনুতাপের মতো একটা কিছু আমার মনের উপর ছুটিয়া আসিল। হৃদয়াবেগের যন্ত্রণায় আমি যন্ত্রচালিতের মতো পাশের ঘরে গিয়া উপস্থিত হইলাম এবং তাঁহার শবাধারের পার্শ্বে হাঁটু গাড়িয়া পড়িলাম ও তাঁহাকে এত শীঘ্র ভুলিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে ও কখনো কখনো তাঁহার কাছে ক্ষমা চাহিলাম।

১২৮

অল্প কয়েক বৎসরের পূর্ব্বপর্য্যন্ত দুয়ার প্রদেশের চা-আবাদী জেলাগুলি ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের জন্য অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর–এই অখ্যাতি ছিল। শেষে ১৯০৬ সালে য়ুরোপীয় আবাদকারী যুবকদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা অতিরিক্ত বেশি হওয়ায়, ইহার কারণ-অনুসন্ধান প্রবর্ত্তিত হয়। তাহাতে দেখা যায় যে, এইসকল রোগ প্রতিনিয়ত ঘটিবার মুখ্য কারণ, সাধারণত যথেষ্ট কুইনীন ব্যবহার না করা। দৈনিক অল্পমাত্রায় কুইনীন-ব্যবহার রোগপ্রতিষেধক বলিয়া উপদিষ্ট ও প্রায় সমগ্র য়ুরোপীয় সমাজ-কর্ত্তৃক গৃহীত হইয়াছে এবং তাহার ফল হইয়াছে যে, তাহাদের মধ্যে কালাজ্বর ঘটা প্রায় থামিয়া গিয়াছে। যথানিয়মে কুইনীন ব্যবহার করায় অনেক য়ুরোপীয় মহিলা ও শিশু দুয়ার প্রদেশে থাকিয়াই অপেক্ষাকৃত উত্তম স্বাস্থ্য ভোগ করিতে সমর্থ হইয়াছেন। এক্ষণে দুয়ার প্রদেশকে মোটের উপর স্বাস্থ্যকর জেলা বলা হইয়া থাকে, দশ বৎসর পূর্ব্বে ইহা চিন্তা করাই অসম্ভব হইত।

১২৯

সম্প্রতি দুয়ার প্রদেশের সমস্ত য়ুরোপীয় সরকারী চিকিৎসকদের নিকটে, তথাকার অধিবাসীদের মধ্যে কুইনীন ব্যবহার সম্বন্ধে অনুসন্ধান করা উপদিষ্ট হইয়াছিল এবং সেই অনুসন্ধানের ফল ১৯১৭ সালের বাঙ্গালার স্বাস্থ্য-সম্বন্ধীয় রিপোর্টে প্রকাশিত হইয়াছে। দেখা গিয়াছে য়ুরোপীয়দের মধ্যে কুইনীনের ব্যবহার শিশু ও বয়ঃপ্রাপ্ত উভয়েরই মধ্যে মোটের উপর ব্যাপক। এবং একজন চিকিৎসক লিখিতেছেন, “প্রতিষেধক কুইনীন-প্রচলনের পর হইতে ইংলণ্ড হইতে সদ্য-আগত যুবাপুরুষ এবং এই জেলায় জাত য়ুরোপীয় শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যের প্রভূত উন্নতি দেখিয়া আমি অত্যন্ত বিস্মিত হইয়াছি।”

১৩০

উহারা ম্যালেরিয়া জ্বরে প্রায় ততটা বেশি ভোগে না এবং উহাদের প্লীহাবৃদ্ধি-রোগ দৈবাৎ দেখা যায়। কালাজ্বর-রোগের সংখ্যার হ্রাস সুস্পষ্ট বুঝা যাইতেছে; এবং যত দূর স্মরণ হয়, গত নয় বৎসরে য়ুরোপীয় অধিবাসিগণের মধ্যে আমি চারিটি মাত্র কালাজ্বরের রোগী পাইয়াছিলাম; উহাদের মধ্যে দুটির রোগ নিতান্তই সামান্য এবং যে একজন রোগীর অবস্থা খুব খারাপ ছিল, সে আমার কাছে স্বীকার করিয়াছিল যে, আমার উপদেশ-অনুযায়ী কুইনীন সে ব্যবহার করিত না। যখন হইতে কুইনীন-ব্যবহার ব্যাপক হইয়াছে তখন হইতে স্বাস্থ্যের সাধারণ উন্নতি-সম্বন্ধে বোধ হয় সর্ব্বসাধারণের মতের ঐক্য ঘটিয়াছে।

১৩১

আমার উপস্থিতিকাল ঘটনাক্রমে হাটবারের পূর্ব্বদিনের সন্ধ্যায় পড়িয়াছিল এবং চারি দিকের প্রতিবেশ হইতে গ্রামবাসীরা তাহাদের পণ্য দ্রব্য লইয়া ভীড় করিতেছিল।