অনুবাদ-চর্চা
যখন দলের পর দল তাহাদের বহুবিধ এবং উজ্জ্বলবর্ণে রঞ্জিত পোষাক পরিয়া এই ক্ষেত্রে আসিয়া পৌঁছিল এবং তাহাদের কৃষ্ণবর্ণ অশ্বলোমনির্ম্মিত পটমণ্ডপ সন্নিবেশিত করিতে আরম্ভ করিল, তখন তাহার চেয়ে অধিক বিচিত্র ও চিত্রবৎ দৃশ্য কল্পনা করা অসম্ভব হইল। দিবালোক ক্ষীণ হইলে যখন সন্ধ্যার অন্ধকার আরম্ভ হইল তখন দৃশ্যটি আরো চিত্তাকর্ষক হইয়া উঠিল।

১৩২

অগ্নিসকল প্রজ্জ্বলিত হইলে শিখাগুলি উজ্জ্বলভাবে জ্বলিতে লাগিল; এবং অশ্বসহ চতুর্দ্দিকে-বিহরণ-কারী মুরদিগের শ্যামমূর্ত্তির উপরে, একটিমাত্র-কেশগুচ্ছ-ধারী রিফিয়ানদের উপরে এবং তাহাদের পার্শ্ববর্ত্তী লম্বা ও সরল তলোয়ারের উপরে ঐ শিখাগুলি বিবর্ণ পাণ্ডুর প্রতিচ্ছায়া নিক্ষেপ করিল। দূরে স্থলান্তর্দ্দেশে আমি দীর্ঘ এক সার উটের দল আভাসে জানিলাম মাত্র; উহারা দেখিতে দূরে দিগন্তে কলঙ্ক-রেখার ন্যায়; তাহারা পর্ব্বতের আঁকা-বাঁকা পথ বাহিয়া হাটের অভিমুখে ঘুরিয়া ঘুরিয়া চলিয়াছে। যখন জনতার লোকেরা বিশ্রাম করিতে আসিল এবং তাম্বু গাড়িতে লাগিল তখন মানবশিশু ঘোড়া গাধা উট এবং মুরগীতে মিলিয়া রাত্রের মতো একত্র ঘেঁষাঘেঁষি হইয়া থাকার সে এক অপূর্ব্ব দৃশ্য।

১৩৩

তখন স্ত্রীলোকেরা তাহাদের সন্ধ্যার খাদ্য প্রস্তুত করিতে প্রবৃত্ত হইল ও ততক্ষণ তাহাদের পাগড়ি-পরা স্বামীরা ব্যস্তভাবে তাহাদের পণ্যদ্রব্য-উদঘাটনে অথবা তাহাদের জন্তুদলের তত্ত্বাবধানে নিযুক্ত হইল। এই বহুবিচিত্র ব্যস্ততাপূর্ণ দৃশ্যের মধ্যে আমাদের পক্ষে এতই নূতন ও চিত্তাকর্ষক জিনিষ ছিল যে, এখানে আমরা দীর্ঘকাল বিলম্ব করিতে পারিতাম। কিন্তু অনিচ্ছাসহকারেই এখান হইতে আমরা ফিরিতে বাধ্য হইয়াছিলাম। যখন বিশেষ সময়ে প্রতি রাত্রে সন্ধ্যা-উপাসনার জন্য শ্বেতপতাকা উন্নমিত করা হয়, সেই সময়ে ধর্ম্মবিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী যে হউক, যদি সহরের মধ্যে না থাকে তবে তাহাকে সে রাত্রের মতো বাহিরে নির্ম্মমভাবে অবরুদ্ধ রাখা হয়। অতএব যাহাতে যথাসময়ে আমরা Cazyold গেটের ভিতর দিয়া ঢুকিয়া এইরূপ একটা বিশ্রী উভয়সঙ্কট উত্তীর্ণ হইতে পারি সেই জন্য যথাসম্ভব সত্বর ফিরিয়া গেলাম।

১৩৪

পরদিন সূর্য্যালোকের প্রথম রশ্মিগুলি সেই বিচিত্র জনতাকে দিবসের কর্ম্মব্যাপারে জাগাইয়া তুলিল। সাম্রাজ্যের সকল বিভাগ হইতে সেখানে লোক-সমাগম হইয়াছিল–অভ্যন্তর প্রদেশ হইতে কৃষ্ণকায়গণ, প্রত্যন্তদেশ হইতে রিফিয়ানেরা, মরুদেশ হইতে আরবেরা, সহরের ইহুদিরা এবং দেশের সর্ব্বাপেক্ষা প্রাচীনজাতীয় বহুসংখ্যক Berber। সম্প্রদায়ের অপূর্ব্ব সম্মিলনীর প্রত্যেক ব্যক্তিই তাহার পণ্যগুলিকে সর্ব্বোচ্চ সুবিধার হারে বিক্রয় করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া ব্যস্তভাবে ব্যবসায় চালাইতেছিল। এই উদ্দ্যমপূর্ণ পণ্যবিনিময়ের দৃশ্য হইতে কেবল এক দিকে যেমনি ফিরিয়া দাঁড়ানো অমনি, পাথর ছুঁড়িয়া মারিলেই পৌঁছায় এতটা দূরের মধ্যে, আমি মূরীয় কবরস্থান দেখিতে পাইলাম।

১৩৫

স্থানটি বিষাদপূর্ণ উজাড় চেহারার। আমাদেরই সমাধিভূমির মতো এখানে ছোটো ছোটো মৃত্তিকাস্তূপের দ্বারা মৃতদিগের শেষ আবাস নির্দ্দিষ্ট এবং অপেক্ষকৃত ধনীদের কবর অনুচ্চ শ্বেতবর্ণ প্রাচীর-দ্বারা পরিবেষ্টিত। যেখানে কোনো খৃষ্টানের প্রবেশের অনুমতি নাই এবং যাহা জীবিত কালে বহুসংখ্যক মুসলমান তীর্থযাত্রীর আশ্রয়, সেই পবিত্র মক্কা নগরীর দিকে মাথা রাখিয়া মৃতদিগকে সমাহিত করা হয়। যাহা হউক পরবর্ত্তী দিনে, শুক্রবারে, মূরদিগের বিশ্রামবাসরে এই স্থানটি সম্পূর্ণ ভিন্ন আকৃতি প্রকাশ করিল। স্ত্রীলোকদের জনতা-দ্বারা অধিকৃত হইল; সকলেই সাদা পোষাকপরা এবং এই স্থানের গুণে তাহাদিগকে ভূতের মতো দেখাইতে লাগিল, অন্তত ইংলণ্ডে ভূতের চেহারা আমরা এমনই মনে করিয়া থাকি।