অনুবাদ-চর্চা
যাহা হউক, তাহাদের সংখ্যা বিস্তর, কারণ বালিকাটি ধনিগৃহের। কেহ বা একটা জিনিষ বহিতেছে, কেহ বা আর কিছু–আসবাব, পরিচ্ছদ, ময়দা, তৈল, মদ্য, পনীর, মিষ্টান্ন। তাহাদিগের পশ্চাতে সুন্দরী ক্যাটেরিনা স্বয়ং আসিতেছে; উৎসবসাজে সে সজ্জিতা, তাহার ঘোড়ার মুখ ধরিয়া আসিতেছে তাহারই এক ছোটো ভাই। কী সুন্দরই তাহাকে দেখাইতেছিল! তাহার পশ্চাতে তাহার অনেক সখী, প্রত্যেকেই বধূর জন্য কোনো একটি দ্রব্য বহন করিয়া আসিতেছিল -একখান আয়না, একটি জপমালা, বধূর আরাধ্য সাধুর চিত্র, একটি ক্রুশকাষ্ঠ, খ্রীষ্টমাতার প্রতিমূর্ত্তি, একটি সেতার ইত্যাদি।

২০০

প্রত্যেক বালিকাই পূর্ণ উৎসবসজ্জায় সজ্জিতা; বাঁশীর উচ্চশব্দে অশ্বগুলি কী গর্ব্বভরেই শিরোৎক্ষেপ করিতেছিল! উহাদিগকে সামলাইয়া রাখিতে যুবকদের যথেষ্ট সতর্কতার প্রয়োজন হইতেছিল, নতুবা বালিকাগণ আসনচ্যুত হইয়া পড়িয়া যাইত। তরুণ Pietro যখন ক্যাটেরিনার পার্শ্বে অশ্বারোহণে যাইতেছিলেন তখন তাঁহাকেও সেদিন কী সুন্দরই দেখাইতেছিল। আমি উহার পূর্ব্বে ও পরে ঐ শ্রেণীর আরো অনেক মিছিল দেখিয়াছি, কিন্তু আর কখনও আমার মনে ঐরূপ অশুভ আশঙ্কার উদয় হয় নাই, আমার হৃৎপিণ্ড যেন স্তব্ধ হইয়া গেল। –এই পর্য্যন্ত বলিয়া ঐ সাধু পাদ্রি একটি বিষাদসূচক দীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করিলেন এবং মস্ত এক টিপ নস্য গ্রহণ করিয়া আরাম পাইলেন ও মাছি তাড়াইবার জন্য মাথার উপরে একটি অত্যুজ্জ্বল বর্ণের সূতি রুমাল অনেকবার ঘুরাইয়া তিনি আপনার কৌতূহলজনক কাহিনীর সূত্র পুনর্ব্বার অবলম্বন করিলেন।–

২০১

যাক্‌, খ্রীষ্টের জন্মোৎসব আসিয়া পড়িল এবং আমি কয়েকজন বন্ধুর মুখে শুনিলাম যে, সাসারির গির্জ্জার প্রাঙ্গণে ঐ পুজ্জু-ভ্রাতৃত্রয়কে গভীরভাবে পরামর্শ করিতে দেখা গিয়াছে এবং ইহা শুভসূচনা করে না। আমি উহা শুনিয়াই অনুভব করিলাম যে,কোনো দুর্ঘটনা ঘটিবে, কারণ ঐ স্থানে উহাদের কিসের প্রয়োজন? এ দিকে খ্রীষ্টোৎসবের দিন পিয়েট্রো ক্যাটেরিনা আমাদের প্রচলিত প্রথাঅনুসারে বন্ধুবান্ধবের সহিত সাক্ষাৎ করিল, যথারীতি ভোজ ও আমোদ-প্রমোদের পর বিশ্রাম করিতে গেল। পরদিন উহাদের বিবাহ হইল, এমন সমারোহ-সহকারে আমাদের পর্ব্বতপ্রদেশে ইহার পূর্ব্বে বিবাহ প্রায় ঘটে নাই। তরুণী বধূ যখন প্রথম বার তাহার নববিবাহিত পতির সহিত এক থালা এবং এক পানপাত্র ব্যবহার করিল তখন তাহার মূর্ত্তি কী মধুর দেখাইতেছিল! অতঃপর তাহারা যে একই ভাগ্য উভয়ে ভোগ করিবে, আমাদের দেশে এই প্রথা তাহারই নিদর্শনস্বরূপ এবং পতিগৃহে আশ্রয়সন্ধানের পূর্ব্বে ইহাই কন্যার পিতৃগৃহে শেষ আহারগ্রহণ। বরের গৃহাভিমুখে মিছিলটি অত্যন্ত প্রমোদময় হইয়াছিল। যথাস্থানে পৌঁছিবামাত্র প্রথা-অনুসারে আনন্দসূচক বন্দুকধ্বনি করা হইল; দ্বারমণ্ডলে পুষ্পমালা ও ফলের গুচ্ছের মধ্যে বরের মা হাতে একটি গমের পাত্র লইয়া দাঁড়াইয়াছিলেন, তাহাতে লবণ মিশ্রিত–ঐগুলির প্রথমটি প্রাচুর্য্যের, দ্বিতীয়টি আতিথেয়তার নিদর্শনস্বরূপ।

২০২

স্ক্যাকাটোস্‌-গৃহিণী সে কী সগৌরব মূর্ত্তিতে দাঁড়াইয়া পুত্রের নববধূর সম্মুখে ঐ পাত্রস্থ দ্রব্যগুলি শূন্যে উৎক্ষিপ্ত করিলেন, কী আবেগের সহিতই তিনি আশীর্ব্বচন উচ্চারণ করিলেন! নৃত্য,ভোজ, এবং পুষ্প-মিষ্টান্ন প্রভৃতি উপহারদান অবশ্য প্রচুর পরিমাণেই হইয়াছিল; কিন্তু বিবাহ-উৎসবদলের অনেকের মনেই পাথরের মতো কী যেন একটা গুরুভার চাপিয়া রহিল। তিন দিন কাটিয়া গিয়াছে, এমন সময় অ্যান্‌ড্রিয়া স্ক্যাকাটোস যিনি ঐ অশুভ বিবাহদিনের পর হইতেই গম্ভীর আলাপবিমুখ এবং হতাশভাব ধারণ করিয়াছিলেন, তিনি হঠাৎ ষ্টাজ্জুতে প্রবেশ করিয়া স্ক্যাকাটোস-জায়াকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন, “পত্নী, অনুনয় করিয়া বলিতেছি তুমি আমার সঙ্গে এসো।”