প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
এক্ষণে আলোচ্য এই যে, প্রাদেশিক জনসভার উদ্দেশ্য কী। কন্গ্রেসে এবং কন্ফারেন্স, ভারতজনসভা ও প্রাদেশিক জনসভায় এই প্রভেদ নির্দিষ্ট হইয়াছে যে, একটি সাম্রাজ্য-ব্যাপারঘটিত এবং আর-একটি কেবল প্রাদেশিক। কিন্তু কন্গ্রেসে যে-সকল প্রস্তাব উত্থাপিত হয় কন্ফারেন্স তাহাতে বিশেষরূপ সাহায্য না করায় কন্গ্রেস ক্রমশ একঘেয়ে হইবার উপক্রম হইয়াছে। যদি এমন বন্দোবস্ত হয় যে, কনগ্রেসের আলোচিত প্রস্তাবগুলির তদন্তভার কনফারেন্সের বিশেষ বিশেষ বিভাগগত সেক্রেটারিদের হস্তে দেওয়া যায় এবং তাঁহারা সংবৎসরকাল সেই-সকল বিষয়ে স্থানীয় বিবরণ সংগ্রহ করিয়া বেসরকারি একটি শাসন-বিবরণী (administration report) প্রস্তুত করেন ও তাহা কনফারেন্সে গ্রাহ্য হইলে পর ভিন্ন ভিন্ন প্রদেশ হইতে কনগ্রেসের সেক্রেটারির নিকট পাঠানো হয় এবং তিনি তাহা হইতে একটি সাধারণ বিবরণী প্রস্তুত করিয়া কনগ্রেসে পাঠ করেন তবে তাহা বিশেষ ফলদায়ক হইতে পারে। রাজ্যচালনার মূলনীতি সম্বন্ধে আমরা অনেক কথা বুঝিয়াছি কিন্তু দোষের বিষয় এই যে, রাজ্যের সংবাদ আমাদের অল্পই জানা আছে—সেইজন্য আমাদের কথার জোর নাই, এবং অনেক সময় সেই কারণেই বিপক্ষের নিকট আমাদের হার মানতে হয়। বর্তমান প্রস্তাবে তাহার প্রতিকার সম্ভব।
কনফারেন্স যে-সকল বিশেষ বিষয়ের অবতারণা হয় তৎসম্বন্ধে যদি আমরা একবৎসর ধরিয়া তথ্য সংগ্রহ করি ও যথোচিত প্রস্তুত হইয়া আসি তাহা হইলে আমাদের এই কনফারেন্স তিন দিবসব্যাপী একটা ইন্দ্রজালের মতো হয় না—সমস্ত বৎসর তাহার কাজ থাকে।
কনফারেন্সের আরও একটি উদ্দেশ্য জনসাধারণের রাজনৈতিক শিক্ষাবিস্তার। যদিও আমরা তাহাদের হিতেচ্ছা করি ও তাহাদের হিতকার্যে প্রবৃত্ত কিন্তু আরও নিকটভাবে প্রত্যক্ষভাবে তাহাদিগকে আমাদের এই অনুষ্ঠানের সহিত সংযুক্ত করিতে না পারিলে যথার্থ উপকার হয় না এবং বিপক্ষেও বলিবার পথ পায় যে আমরা সাধারণের প্রকৃত প্রতিনিধি নহি। এই জনসাধারণকে আকর্ষণ করিবার জন্য গত কনফারেন্সে বাংলা ভাষায় কার্যনির্বাহের অবতারণা হয়। ইহা ছাড়া, সাধারণের, জলকষ্ট প্রভৃতি, যে-সকল বিষয়ে বিশেষরূপে সংশ্লিষ্ট কনফারেন্সে তাহার যথেষ্ট আলোচনা হওয়া আবশ্যক।
বৎসরের আলোচনায় দুটি বিষয় বিশেষ করিয়া চক্ষে পড়ে; রাজদ্রোহের ধুয়া এবং সর্বপ্রকারে দমন করিবার চেষ্টা।
আমাদে বিশ্বাস, একদল ইংরাজের প্ররোচনায় নিতান্ত বাধ্য হইয়া কর্তৃপুরুষেরা রাজদ্রোহ সম্বন্ধে বিশেষ শাসন প্রচার করিয়াছেন। আসল কথা এই যে, একপক্ষে আমাদের রাজা আমাদিগকে কতকগুলি স্বাধীন অধিকার দিতে প্রতিশ্রুত, অপরপক্ষে পারকতা দ্বারা আমাদের দাবিও আমরা সপ্রমাণ করিয়াছি, এক্ষণে রাজদ্রোহের অপরাধ আরোপ না করিলে আমাদিগকে প্রাপ্য অধিকার হইতে বঞ্চিত করিবার কোনো যুক্তিসংগত কারণ পাওয়া যায় না।