প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
ওই কর-সংস্থাপন কামনায় সাহেব সওদাগারদিগের সংগ্রামের সহিত দেশীয় স্বদেশ-হিতৈষীদিগের সংযোগে ভারত গবর্নমেন্ট না হউন ব্রিটিশ রাজনৈতিকেরা বিলক্ষণ বিচলিত হইয়াছিলেন। পার্লামেন্টে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উঠিয়াছিল। এবং অচিরাৎ বিলাতি আমদানি কাপড় সুতার উপর কর না বসিলে অসন্তোষের উগ্র অনলে ভারতরাজ্য দগ্ধ হইবে, বিলাতে ও ভারতে এই অমূলক অলীক কথাও অপ্রকাশ ছিল না। তৎকালে ওই অসন্তোষ আস্ফলিত করিবার এক হাস্যকর অতি বৃহৎ সুযোগও উপস্থিত হইয়াছিল। ট্যারিফ আন্দোলনের সময় উত্তরবিহারের আমবাগানে এক আমোদ উপস্থিত হয়। সকলেরই স্মরণ আছে সে আমোদ কী—বৃক্ষে বৃক্ষে কর্দমাক্ত কেশ শোণিত সম্পৃক্ত। কোন্ গ্রাম্য বালকেরা ওই বালসুলভ ক্রীড়া করিত, অদ্যাপি আবিস্কৃত হয় নাই। ত্রিহুতিয়েরা উহাকে বলিয়াছিল ‘হনুমানজীউর তিলক’। হনুমানজীউর হউক, আর যাহারই হউক, এই তথাকথিত তিলক একটা রাজনৈতিক তুফান উপস্থিত করিয়াছিল। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানেরা উহাতে একটা অঞ্জতা আসন্ন ও অতি বিরাট বিভ্রাট কল্পনা করিয়াছিলেন, তিলকাঙ্কে প্রকৃত প্রস্তাবেই সেই ত্রেতাযুগপ্রসিদ্ধ বীরের লঙ্কাদগ্ধকারী মার্তন্ড মূর্তি সন্দর্শন করিয়া আতঙ্কে অতি চঞ্চল হইয়া পড়িয়াছিলেন। রাজার জাতি যাহাতে জুজু দেখেন, তাহাই রাজনীতির অন্তর্গত; অন্যের তুচ্ছাদপি তুচ্ছ হইলেও তাহা রাজনীতির চক্ষে ভীষণ বিভীষিকা; সুতরাং ত্রিহুতের তিলক-চালাচালি সিপাই মিউটিনির সময়ের চাপাটি চক্ষে ভীষণ বিভীষিকা; সুতরাং ত্রিহুতের তিলক-চালাচালি সিপাই মিউটিনির সময়ের চাপাটি-চালাচালির অনুরূপ বলিয়াই উক্ত হইয়াছিল। অন্যান্য অনেক অদ্ভুত কারণের মধ্যে এই তিলকের একটা প্রকান্ড কারণ আবিস্কৃত হইয়াছিল এই যে, কাপড় সুতার উপর কর না বসাতেই লোকে অসন্তোষে উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে; অচিরাৎ একটা মিউটিনি করিয়া অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদিগকে অ্যান্ডাবাচ্ছাসহ সটান অক্ষয় স্বর্গধামে পাঠাইবে। বিপ্লব অবশ্যম্ভাবী আসন্ন। সেই বিপ্লবের পূর্বলক্ষণ আম্রবৃক্ষে তিলকাকারে অঙ্কিত!!
মোটের উপর অবস্থা হইয়াছিল এই। অতএব উপরোক্ত আন্দোলন অস্বাভাবিক ও মুষ্টিমেয় লোকের মধ্যে উহ্থিত হইলেও নিস্ফল হইবে কেন? মাঞ্চিস্টারের স্বার্থ ও স্টেট-সেক্রেটারির সদিচ্ছা সত্ত্বেও বিলাতি আমদানি কাপড় সুতার করের অঙ্কুর তখনই হইয়াছিল। সে অঙ্কুর এখন এক বৃহৎ বৃক্ষে পরিণত হইয়াছে। বিলাতি আমদানি কাপড় ও সুতার উপর শুল্ক বসিয়াছে এবং সেইসঙ্গে ও সেই অনুপাতে এ-দেশীয় কলের সুতার উপরেও কর নির্দিষ্ট হইয়াছে। হইবারই কথা। স্বাধীন বাণিজ্যের মূল সূত্র এবং ততোধিক, বাণিজ্যপরায়ণ ব্রিটিশ গবর্নমেন্টের লাঙ্কেশায়েরি স্বার্থ, উহা অগত্যাই করিতে বাধ্য। বিলাতি আমদানি কাপড় সুতার উপর কর বসিলে এ-দেশীয় কলের কাপড় সুতার উপর অবশ্যই কর বসিবে, এ কথা গবর্নমেন্ট তখনই স্পষ্টাক্ষরে বুঝাইয়া দিয়াছিলেন। আন্দোলনকারীদের কতক লোকে হয়তো তাহা বুঝেন নাই; কতক লোকে তাহা বুঝিয়া সজ্ঞানে ও সুস্পষ্ট ভাষায় সে করও বহনে সন্মত হইয়াছিলেন। নহিলে পরের যাত্রা ভঙ্গার্থে আপন নাসিকার সম্পূর্ণ ছেদনকার্য সম্পাদন হইবে কেন? অতএব যাঁহারা বিলাতি আমদানি বস্ত্রের মাশুলের আশঙ্কায় এ-দেশীয় কলের কাপড়ের উপর কর দিতে স্বীকার করিয়াছিলেন, অন্তত তাঁহাদের পক্ষে এখন