আবদারের আইন
তার পর কেবল এক তাঁতিকুলের সুবিধা সচ্ছলতার জন্য, সমগ্র দেশের লোক দুঃখ সহ্য করিবে, সুলভ বস্ত্র ব্যবহারে বঞ্চিত হইবে, সভ্যতার কথা ছাড়িয়া দিয়া, ইহাই কি স্বভাবের নিয়ম? অথবা সুযুক্তির কথা? এখন সর্বশেষে আর-একটি প্রশ্ন আছে। এই যে আমদানি মাশুল বসিল, এ মাশুল ফলিতার্থে দিবে কে? দিবে বিক্রেতা কিংবা ক্রেতা? ক্রেতারাই তো এ মাশুল দিতে হইবে। মাঞ্চিস্টার তো এ মাশুল দিবে না মহাশয়; দিতে হইবে যে আমাদেরই। এ কথাটি কি আপনারা একটিবারও ভাবিয়াছিলেন? হায়! ভাবিবার অবসর পান নাই; ভাবা অনাবশ্যক মনে করিয়াছিলেন।

অতীব অভাগ্যের বিষয় যে, আবদারকারীরা চিন্তাশীলতার অতি গুরুত্বে বস্ত্রক্রেতা বলিয়া যে একটা জীবও জগতে আছে তাহা একেবারেই বিস্মৃত হইয়া গিয়াছিলেন; অথবা তাহাদের অস্তিত্ব আদৌ বিবেচনাধীনে গ্রহণ করেন নাই। তাঁহারা হয়তো মনে করিয়াছিলেন এ মাশুল মাঞ্চিস্টারই দিবে। ভারতবাসীর দিতে হবে না। কিন্তু স্টেট-সেক্রেটারি আপন কর্তব্য ভুলেন নাই। তিনি যথাসময়েই স্মরণ করিয়া দিয়াছিলেন যে, আমদানি-কর মাঞ্চিস্টারের স্কন্ধে পড়িবে না; প্রকৃত প্রস্তাবে পড়িবে তাহা ভারতেরই স্কন্ধে। পরন্তু তাহাতে করিয়া দরিদ্র রায়তের বস্ত্র ব্যবহারে সবিশেষ বিভ্রাটই ঘটিবে। কিন্তু সে কথা শুনে কে? সেক্রেটারির সমীচীন উক্তি তৎপ্রতি পলিসি আরোপেরই কারণ হইয়াছিল। কিন্তু উচিত কথা বলিতে হইলে সেক্রেটারি-অব-স্টেট এ সম্বন্ধে অবশ্যই ধন্যবাদের পাত্র। তবে তিনি সকল দিক রাখিতে গিয়া কোনো দিকই রক্ষা করিতে পারেন নাই; এ কথাও সত্য। তিনি এ-দেশীয় আন্দোলকদিগের সন্তোষার্থে বিলতি বস্ত্রের আমদানি-কর এবং মাঞ্চিস্টারের মন রাখিবার জন্য এ দেশে এক্সাইস কর বসাইয়াছেন—ফল হইয়াছে উভয় পক্ষেরই অসন্তোষ। পরন্তু বস্ত্রক্রতা দরিদ্র প্রজা-সাধারণেরও তিনি সন্তোষভাজন হতে পারেন নাই। কারণ কাপড়ের কর তাহাদিগেরই দতে হইবে।

এ স্থলে কথা উঠিতে পারে যে, গবর্নমেন্টের অর্থের অনটন। বজেটে আয় অপেক্ষা ব্যয়ের অঙ্ক বিষম বেশি। ব্যয়ের অঙ্কের সহিত আয়ের অঙ্ক যে রূপেই হউক সমান করিতে হইত। তজ্জন্য গরিব রায়তের শরীরের শিরা কাটিয়া শোণিত বাহির করিতে হইলেও গবর্নমেন্ট ছাড়িতেন না। অতএব ট্যারিফট্যাক্স হইয়া বরং ঠেকাইয়াছে। নহিলে নিশ্চয়ই আর-একটা নেহাত সাংঘাতিক শুল্ক সংস্থাপিত হইয়া দেশমধ্যে মহা অনর্থ ঘটাইত।

আমরা এরূপ যুক্তি আপাদমস্তক অনুমোদন করিতে পারি না। বজেটের দুই দিকে একই অঙ্ক সন্নিবেশের জন্য গবর্নমেন্ট গর্হিত উপায়ে আয়ের অঙ্ক না বাড়াইয়া উচিত উপায়ে ব্যয়ের অঙ্ক কমাইয়া আয়ের অঙ্কের অনুপাতে আনিতে পারিতেন। তজ্জন্য আন্দোলন হইতেছিল। সেই আন্দোলন অধিকতর ব্যাপ্ত ও বলশালী করা উচিত ছিল। ন্যাশনাল কংগ্রেস গবর্নমেন্টের অন্যায্য ও অতিরিক্ত ব্যয় কমাইবার জন্য বহুকাল আন্দোলন করিতেছেন। সে আন্দোলন একেবারেই যে নিস্ফল হইয়াছে ও হইবে এমনও নয়! এ সম্বন্ধে অন্তত একটা কমিশনেরও আদেশ হইয়াছে। সে কমিশনের কার্য আরম্ভ ও শেষ না হওয়া পর্যন্ত গবর্নমেন্টকে এই উৎকট কর বসাইবার অবসর দেওয়া ও অনুরোধ করা প্রজানীতির উচিত হয় নাই। গবর্নমেন্ট স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া বস্ত্র ব্যতীত অন্যান্য দ্রব্যের উপর আমদানি ট্যাক্স বসাইয়াছিলেন। তাহারই প্রাণপন প্রতিবাদ হওয়া আবশ্যক ছিল; গবর্নমেন্ট যে দ্রব্যের উপর ট্যাক্স বসাইতে উৎসুক ছিলেন না, অস্বাভাবিক আন্দোলন দ্বারা তাহাতে তাঁহাকে প্রবৃত্ত করা প্রকৃত প্রজানীতির অনুরূপ কার্য হয় নাই। পরন্তু, এই কাপড়র কর আর কোনো একটা কুৎসিত কর সংস্থাপন করিলে এবং প্রজাপক্ষ হইতে অধ্যবসায়ের সহিত তাহাতে আপত্তি হইলে, সে কর নিশ্চয়ই চিরকাল টিঁকিত না। ফলত আবদার করিয়া একটা এত বড়ো করভার গ্রহণ করা নেহাত নির্বোধের


১) I should like to ask who is going to pay the taxes on the goods imported? The people of India, the consumers of India… whether import duties are right or wrong, whatever duty you levy on cotton goods must inevitably be paid by the people who wear these cotton goods in India. The tax, would therefore be a tax upon the people of India and not upon the Lancashire manufacture. সেক্রেটারি-অব-স্টেট মি. ফাউলারের বক্তৃতা হইতে উদ্‌ধৃত।