বন-ফুল
জ্বালালি!— জ্বলিলি বোন! খুলি মর্ম্মদ্বার—
কাঁদিতে করিগে যত্ন যেথা
নিরিবিলি’।
কমলা চাহিয়া রয়, নাহি বহে শ্বাস।
হৃদয়ের গূঢ় দেশে অশ্রুরাশি মিলি
ফাটিয়া বাহির হতে করিল প্রয়াস—
কমলা কহিল ধীরে “জ্বালালি
জ্বলিলি!”
আবার কহিল ধীরে, আবার হেরিল নীরে
যমুনাতরঙ্গে খেলে পূর্ণ শশধর—
তরঙ্গের ধারে ধারে রঞ্জিয়া রজতধারে
সুনীল সলিলে ভাসে রজন্ময় কর!
হেরিল আকাশ-পানে সুনীল জলদযানে
ঘুমায়ে চন্দ্রিমা ঢালে হাসি এ
নিশীথে।
কতক্ষণ চেয়ে চেয়ে পাগল বনের মেয়ে
আকুল কত কি মনে লাগিত ভাবিতে!
‘ওই খানে আছে পিতা, ওই খানে আছে মাতা,
ওই জ্যোৎসনাময় চাঁদে করি বিচরণ
দেখিছেন হোথা হোতে দাঁড়ায়ে সংসারপথে
কমলা নয়নবারি করিছে মোচন।
একি রে পাপের অশ্রু? নীরদ আমার—
নীরদ আমার যথা আছে লুক্কায়িত,
সেই খান হোতে এই অশ্রুবারিধার
পূর্ণ উৎস-সম আজ হল উৎসারিত।
এ ত পাপ নয় বিধি! পাপ কেন হবে?
বিবাহ করেছি বলে নীরদে আমার
ভাল বাসিব না? হায় এ হৃদয় তবে
বজ্র দিয়া দিক বিধি করে চুরমার!