মাছ ধরা
উপরের কথা হইতে একটা দৃষ্টান্ত আমার মনে পড়িতেছে। ভাবের সরোবরে আমরা জাল ফেলিয়া মাছ ধরিতে পারি না; ছিপ ফেলিয়া ধরিতে হয়। মাছ ধরিবার জাল আবিষ্কার হয় নাই;জানি না, কোন কালে হইবে কি না। ছিপ ফেলিয়া বসিয়া আছি, কখন্ মাছ আসিয়া ঠোক্রায়; কিন্তু ঠোক্রাইলেই হইল না, মাছকে ডাঙ্গায় তোলাই আসল কাজ। জলের মধ্যে অনেক ভাবে কিল্বিল্ করিয়া থাকে, কিন্তু তাহাদের ডাঙ্গায় উঠাইয়া তোলা সাধারণ ব্যাপার নহে। ঠোক্রাইল, বঁড়শি লাগিল না; বঁড়শি লাগিল, ছিঁড়িয়া পলাইল। অনেক মাছ যতক্ষণ জলে আছে, যতক্ষণ খেলাইতেছি, ততক্ষণ মনে হইতেছে প্রকাণ্ড; তুলিয়া দেখি, যত বড়ো মনে হইয়াছিল তত বড়োটা নয়। ভাব আকর্ষণ করিবার জন্য কত প্রকার চার ফেলিতে হয়, কত কৌশল করিতে হয়, তাহা ভাবব্যবসায়ীরা জানেন। জল নাড়া না পায়, খুব স্থির থাকে; ভাব যখন বঁড়শিবিদ্ধ হইল তবুও জোর করিতেছে, উঠিতেছে না, তখন যেন অধীর হইয়া টানাহেঁচড়া করিয়া উঠাইবার চেষ্টা না করা হয়— তাহা হইলে সূতা ছিঁড়িয়া যায়— যথেষ্ট খেলাইয়া আয়ত্ত করিয়া তুলিবে। আমরা পরের মনঃসরোবর হইতেও মাছ তুলিয়া থাকি। আমার এক সহচর আছেন, তাঁহার পুষ্করিণী আছে কিন্তু ছিপ নাই। অবসরমত আমি তাঁহার মন হইতে মাছ ধরিয়া থাকি, খ্যাতিটা আমার। নানা প্রকার কথোপকথনের চার ফেলিয়া তাঁহার মাছগুলাকে আকর্ষণ করিয়া আনি ও খেলাইয়া খেলাইয়া জমিতে তুলি।