শৈশবসঙ্গীত
            তাহাদের পড়িত স্মরণে,
দুটিতে মগন হয়ে,           অতীতের কথা লয়ে
            ফুরাতে নারিত সারাক্ষণে।
আধ’ঘুমঘোরে প্রাতে,      পল্লবমর্ম্মর-সাথে
            শুনি বিপাশার কলস্বর—
স্বপনে হইত মনে            দূর সে দ্বীপের বনে
            শুনিতেছে নির্ঝরঝর্ঝর!
দ্বীপের কুটীরখানি           কল্পনায় মনে আনি
            ভাবিত সে শূন্য আছে পড়ি,
ভগ্ন ভিতে উঠে লতা,       গৃহসজ্জা হেথা হোথা
            প্রাঙ্গণে যেতেছে গড়াগড়ি,
হয়ত গো কাঁটাগাছে           এত দিনে ঘিরিয়াছে
            ললিতার সাধের কানন—
এত দিনে শাখা জুড়ি          ফুটেছে মালতীকুঁড়ি
            দেখিবার নাই কোন জন।
সেই যে শৈলেতে উঠি         বসিয়া রহিত দুটি,
            নারিকেলকুঞ্জটির কাছে—
চারি দিকে শিলারাশি,         ছড়াছড়ি পাশাপাশি
            তাহারা তেমনি রহিয়াছে।
মজিয়া কল্পনামোহে,        কত কি ভাবিত দোঁহে,
            মাঝে মাঝে উঠিত নিশ্বাস,
অতীত আসিত ফিরে,        গায়ে যেন ধীরে ধীরে
            লাগিত সে দ্বীপের বাতাস।
একদা চাঁদিনী রাতি,           দুজনে প্রমোদে মাতি
            গেছে এক বিজন কাননে—
ভ্রমিতে ভ্রমিতে তথা,       কহিতে কহিতে কথা
            কত দূরে গেল আন্‌মনে।
সহসা যে বিভাবরী,            আইল আঁধার করি—
            গগনে উঠিল মেঘরাশি,
পথ নাহি দেখা যায়,           ক্ষণে ক্ষণে ঝলকায়
            বিদ্যুতের পরিহাসহাসি।