রাজা

সুদর্শনা। তুমি হাত দিয়ে পথ আটকাও না বলেই তোমার কাছ থেকে পালাতে মনে এত দ্বিধা হয়। তুমি কেশের গুচ্ছ ধরে জোর করে আমাকে টেনে রেখে দাও-না কেন। তুমি আমাকে মারো-না কেন। মারো, মারো, আমাকে মারো। তুমি আমাকে কিছু বলছ না, সেইজন্যেই আরো অসহ্য বোধ হচ্ছে।

রাজা। কিছু বলছি নে, কে তোমাকে বললে।

সুদর্শনা। অমন করে নয়, অমন করে নয়, চীৎকার করে বলো, বজ্রগর্জনে বলো—আমার কান থেকে অন্য সকল কথা ডুবিয়ে দিয়ে বলো— আমাকে এত সহজে ছেড়ে দিয়ো না, যেতে দিয়ো না।

রাজা। ছেড়ে দেব, কিন্তু যেতে দেব কেন।

সুদর্শনা। যেতে দেবে না? আমি যাবই।

রাজা। আচ্ছা যাও।

সুদর্শনা। দেখো, তা হলে আমার দোষ নেই। তুমি আমাকে জোর করে ধরে রাখতে পারতে, কিন্তু রাখলে না— আমাকে বাঁধলে না। আমি চললুম। তোমার প্রহরীদের হুকুম দাও, আমাকে ঠেকাক।

রাজা। কেউ ঠেকাবে না। ঝড়ের মুখে ছিন্ন মেঘ যেমন অবাধে চলে তেমনি তুমি অবাধে চলে যাও।

সুদর্শনা। ক্রমেই বেগ বেড়ে উঠছে, এবার নোঙর ছিঁড়ল। হয়তো ডুবব, কিন্তু আর ফিরব না।

[দ্রুত প্রস্থান
সুরঙ্গমার প্রবেশ ও গান

ভয়েরে মোর আঘাত করো

       ভীষণ, হে ভীষণ।

কঠিন করে চরণ-’পরে

       প্রণত করো মন।

বেঁধেছ মোরে নিত্যকাজে

প্রাচীরে-ঘেরা ঘরের মাঝে,

নিত্য মোরে বেঁধেছে সাজে

       সাজের আভরণ।

এসো হে ওহে আকস্মিক,

ঘিরিয়া ফেলো সকল দিক—

মুক্ত পথে উড়ায়ে নিক

       নিমেষে এ জীবন।

তাহার পরে প্রকাশ হোক

উদার তব সহাস চোখ,

তব অভয় শান্তিময়

       স্বরূপ পুরাতন॥