রাজা
১১
শিবির

কাঞ্চী। (কান্যকুব্জের দূতের প্রতি) তোমাদের রাজাকে গিয়ে বলো গে, আমরা তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতে আসি নি। রাজ্যে ফিরে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়ে আছি, কেবল সুদর্শনাকে এখানকার দাসীশালা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবার জন্যেই অপেক্ষা।

দূত। মহারাজ, স্মরণ রাখবেন, রাজকন্যা তাঁর পিতৃগৃহে আছেন।

কাঞ্চী। কন্যা যতদিন কুমারী থাকে ততদিনই পিতৃগূহে তার আশ্রয়।

দূত। কিন্তু পতিকুলের সঙ্গেও তাঁর সম্বন্ধ আছে।

কাঞ্চী। সে সম্বন্ধ তিনি ত্যাগ করেই এসেছেন।

দূত। জীবন থাকতে সে সম্বন্ধ ত্যাগ করা যায় না; মাঝে মাঝে বিচ্ছেদ ঘটে, কিন্তু অবসান ঘটতেই পারে না।

কাঞ্চী। সেজন্য কোনো সংকোচ বোধ করতে হবে না; কারণ, তাঁর স্বামীই স্বয়ং তাঁকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। রাজন্‌!

সুবর্ণ। কী মহারাজ!

কাঞ্চী। তোমার মহিষীকে কি পিতৃগৃহে দাসীত্বে নিযুক্ত রেখে তুমি স্থির থাকবে।

সুবর্ণ। এমন কাপুরুষ আমি না।

দূত। এ যদি আপনার পরিহাস-বাক্য না হয় তা হলে রাজভবনে আতিথ্য নিতে দ্বিধা কিসের।

কাঞ্চী। রাজন্‌!

সুবর্ণ। কী মহারাজ।

কাঞ্চী। তুমি কি তোমার মহিষীকে ভিক্ষা করে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।

সুবর্ণ। এও কি কখনো হয়।

দূত। তবে কী ইচ্ছা করেন।

কাঞ্চী। সেও কি বলতে হবে।

সুবর্ণ। তা তো বটেই। সে তো বুঝতেই পারছেন।

কাঞ্চী। মহারাজ যদি সহজে তাঁর কন্যাকে আমাদের হাতে সমর্পণ না করেন ক্ষত্রিয়ধর্ম-অনুসারে বলপূর্বক নিয়ে যাব, এই আমার শেষ কথা।

দূত। মহারাজ, আমাদের রাজাকেও ক্ষত্রিয়ধর্ম পালন করতে হবে। তিনি তো কেবল স্পর্ধাবাক্য শুনেই আপনার হাতে কন্যা দিয়ে যেতে পারেন না।

কাঞ্চী। এইরকম উত্তর শোনবার জন্যেই প্রস্তুত হয়ে এসেছি, এই কথা রাজাকে জানাও গে।

[ দূতের প্রস্থান

সুবর্ণ। কাঞ্চীরাজ, দুঃসাহসিকতা হচ্ছে।

কাঞ্চী। তাই যদি না হবে তবে এমন কাজে প্রবৃত্ত হয়ে সুখ কী।

সুবর্ণ। কান্যকুব্জরাজকে ভয় না করলেও চলে, কিন্তু—

কাঞ্চী। ‘কিন্তু’ কে ভয় করতে আরম্ভ করলে জগতে নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাওয়া যায় না।