রাজা

সুবর্ণ। সত্য বলি মহারাজ, ঐ কিন্তুটি দেখা দেন না, কিন্তু ওঁর কাছ থেকে নিরাপদে পালাবার জায়গা জগতে কোথাও নেই।

কাঞ্চী। নিজের মনে ভয় থাকলেই ঐ কিন্তুর জোর বেড়ে ওঠে।

সুবর্ণ। ভেবে দেখুন-না, বাগানে কী কাণ্ডটা হল। আপনি আটঘাট বেঁধেই তো কাজ করেছিলেন, তার মধ্যেও কোথা দিয়ে কিন্তু এসে ঢুকে পড়ল। তিনিই তো রাজা, তাঁকে মানব না ভেবেছিলুম— আর না মেনে থাকবার জো রইল না।

কাঞ্চী। ভয়ে মানুষের বুদ্ধি নষ্ট হয়, তখন মানুষ যা-তা মেনে বসে। সেদিন যা ঘটেছিল সেটা অকস্মাৎ ঘটেছিল।

সুবর্ণ। আপনি যাঁকে অকস্মাৎ বলছেন আমি তাঁকেই কিন্তু বললেম। কোনোমতে তাঁকে বাঁচিয়ে চললেই তবে বাঁচন।

সৈনিকের প্রবেশ

সৈনিক। মহারাজ, কোশলরাজ অবন্তীরাজ ও কলিঙ্গের রাজা সসৈন্যে আসছেন সংবাদ পেলুম।

[প্রস্থান

কাঞ্চী। যা ভয় করছিলুম তাই হল। সুদর্শনার পলায়ন-সংবাদ রটে গিয়েছে। এখন সকলে মিলে কাড়াকাড়ি করে সকলকেই ব্যর্থ হতে হবে।

সুবর্ণ। কাজ নেই মহারাজ! এ-সমস্ত ভালো লক্ষণ নয়। আমি নিশ্চয় বলছি, আমাদের রাজাই এই গোপন সংবাদটা রটিয়ে দিয়েছেন।

কাঞ্চী। কেন। তাতে তাঁর লাভ কী।

সুবর্ণ। লোভীরা পরস্পর কাটাকাটি ছেঁড়াছিঁড়ি করে মরবে— মাঝের থেকে যাঁর ধন তিনি নিয়ে যাবেন।

কাঞ্চী। এখন বেশ বুঝছি, কেন তোমাদের রাজা দেখা দেন না। ভয়ে তাঁকে সর্বত্রই দেখা যাবে, এই তাঁর কৌশল। কিন্তু এখনো আমি বলছি, তোমাদের রাজা আগাগোড়াই ফাঁকি।

সুবর্ণ। কিন্তু মহারাজ, আমাকে ছেড়ে দিন।

কাঞ্চী। তোমাকে ছাড়তে পারছি নে, তোমাকে এই কাজে আমার বিশেষ প্রয়োজন।

সৈনিকের প্রবেশ

সৈনিক। বিরাট পাঞ্চাল ও বিদর্ভ -রাজও এসেছেন। তাঁদের শিবির নদীর ও পারে।

[প্রস্থান

কাঞ্চী। আরম্ভে আমাদের সকলকে মিলে কাজ করতে হবে। কান্যকুব্জের সঙ্গে যুদ্ধটা আগে হয়ে যাক, তার পরে একটা উপায় করা যাবে।

সুবর্ণ। আমাকে ঐ উপায়টার মধ্যে যদি না টানেন তা হলে নিশ্চিন্ত হতে পারি। অমি অতি হীন ব্যক্তি, আমার দ্বারা—

কাঞ্চী। দেখো হে ভণ্ড, উপায় জিনিসটাই হচ্ছে হীন। সিঁড়ি বল, রাস্তা বল, পায়ের তলাতেই থাকে। উপায় যদি উচ্চশ্রেণীর হয়, তাকে ব্যবহারে লাগাতে অনেক চিন্তার দরকার করে। তোমার মতো লোককে নিয়ে কাজ চালাবার সুবিধে এই যে, কোনোপ্রকার ভণ্ডামি করতে হয় না। কিন্তু আমার মন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করতে গেলেও চুরিকে লোকহিত নাম না দিলে শুনতে খারাপ লাগে।

সুবর্ণ। কিন্তু দেখেছি, মন্ত্রীমশায় কথাটার আসল অর্থটাই বুঝে নেন।

কাঞ্চী। এই ভাষাতত্ত্বটুকু তার জানা না থাকলে তাকে মন্ত্রী না করে গোয়ালঘরের ভার দিতুম। যাই, রাজাগুলোকে একবার বোড়ের মতো চেলে দিয়ে আসি গে। সকলেরই যদি রাজার চাল হয় তা হলে চতুরঙ্গ খেলা চলে না।