প্রকৃতির প্রতিশোধ

দ্বিতীয়। রাত না গেলে তো দিন হবে না।

প্রথম। (প্রণাম করিয়া) ঠাকুর, একটা সন্দেহ উপস্থিত হয়েছে।

সন্ন্যাসী। কী সংশয়?

দ্বিতীয়। প্রভু, আমাদের দুই গুরুর বিচার শুনে অবধি আমরা দুই জনে মিলে তিন দিন তিন রাত্রি অনবরত ভাবছি স্থূল হতে সূক্ষ্ম, না সূক্ষ্ম হতে স্থূল, কিছুতেই নির্ণয় করিতে পারছি নে।

সন্ন্যাসী।                স্থূল কোথা! স্থূল সূক্ষ্ম ভেদ কিছু নাই,

নানারূপে ব্যক্ত হয় শক্তি প্রকৃতির।
সবই সূক্ষ্ম, সবই শক্তি, স্থূল সে তো ভ্রম।

প্রথম। আমিও তো তাই বলি। আমার মাধব গুরুও তো তাই বলেন।

দ্বিতীয়। আমারও তো ঐ মত। আমার জনার্দন গুরুরও তো ওই মত।

উভয়ে। (প্রণাম করিয়া) চললেম প্রভু।

[বিবাদ করিতে করিতে প্রস্থান

সন্ন্যাসী।                হা রে মূর্খ, দুজনেই বুঝিল না কিছু।

এক খণ্ড কথা পেয়ে লভিল সান্ত্বনা।
জ্ঞানরত্ন খুঁজে খুঁজে খনি খুঁড়ে মরে—
মুঠো মুঠো বাক্যধুলা আঁচল পুরিয়া,
আনন্দে অধীর হয়ে ঘরে নিয়ে যায়।


এক দল মালিনীর প্রবেশ
গান
বুঝি বেলা বহে যায়,
কাননে আয়, তোরা আয়।
আলোতে ফুল উঠল ফুটে, ছায়ায় ঝরে পড়ে যায়।
সাধ ছিল রে পরিয়ে দেব মনের মতন মালা গেঁথে,
কই সে হল মালা গাঁথা, কই সে এল হায়,
যমুনার ঢেউ যাচ্ছে বয়ে, বেলা চলে যায়।

পথিক। কেন গো এত দুঃখ কিসের! মালা যদি থাকে তো গলাও ঢের আছে।

মালিনী। হাড়কাঠও তো কম নেই।

দ্বিতীয় মালিনী। পোড়ারমুখো মিন‍্‍সে, গোরুবাছুর নিয়েই আছে। আর,আমি যে গলা ভেঙে মরছি, আমার দিকে এক বার তাকালেও না! (কাছে গিয়া গা ঘেঁষিয়া) মর্ মিন‍্‍সে গায়ের উপর পড়িস কেন?

সেই লোক। গায়ে পড়ে ঝগড়া কর কেন! আমি সাত হাত তফাতে দাঁড়িয়ে ছিলুম।