প্রকৃতির প্রতিশোধ
বিপরীতে মুখ শুধু ফিরাইয়া আছি,
উজানে যেতেছি বলে হইতেছে ভ্রম,
পশ্চাতে স্রোতের টানে চলেছি ভাসিয়া—
সবাই চলেছে যেথা ছুটেছি সেথাই!


দরিদ্র বালিকার প্রবেশ
বালিকা।    ওগো, দয়া করো মোরে আমি অনাথিনী।


সহসা চমকিয়া উঠিয়া
সন্ন্যাসী।    কে রে তুই? কে রে বাছা? কোথা হতে এলি?
অনাথিনী? তুইও কি তারি মতো তবে?
তোরেও কি ফেলে কেউ গিয়েছে পলায়ে?
তারেই কি চারি দিকে খুঁজিয়া বেড়াস?
বৎসে, কাছে আয় তুই — দে রে পরিচয়।
বালিকা।    ভিখারি বালিকা আমি, সন্ন্যাসী ঠাকুর,
অন্ধ বৃদ্ধ মাতা মোর রোগশয্যাশায়ী।
আসিয়াছি একমুঠা ভিক্ষান্নের তরে।
সন্ন্যাসী।     আহা বৎসে, নিয়ে চল্‌ কুটিরেতে তোর।
রুগ্‌ণ তোর জননীরে দেখে আসি আমি।
[প্রস্থান
কতকগুলি সন্তান লইয়া এক জন স্ত্রীলোকের প্রবেশ


স্ত্রী। দেখ্ দেখি, মিশ্রদের বাড়ির ছেলেগুলি কেমন রিষ্টপুষ্ট! দেখলে দু-দণ্ড চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে — আর এঁদের ছিরি দেখো-না, যেন বৃষকাষ্ঠ দাঁড়িয়ে আছেন, যেন সাতকুলে কেউ নেই, যেন সাত জন্মে খেতে পান না।

সন্তানগণ। তা আমরা কী করব মা! আমাদের দোষ কী?

মা। বললেম—বলি, রোজ সকালে ভালো করে হলুদ মেখে তেল মেখে স্নান কর্, ধাত পোষ্টাই হবে, ছিরি ফিরবে— তা তো কেউ শুনবে না! আহা ওদের দিকে চাইলে চোখ জুড়িয়ে যায়, রং যেন দুধে-আলতায় —

সন্তানগণ। আমাদের রং কালো তা আমরা কী করব?

মা। তোদের রং কালো কে বললে? তোদের রং মন্দ কী? তবে কেন ওদের মতো দেখায় না?

[প্রস্থান
সন্ন্যাসীর প্রবেশ। একটি কন্যা লইয়া স্ত্রীলোকের প্রবেশ


সন্ন্যাসী।     কোথায় চলেছ বাছা।