প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
তাতা থৈথৈ তাতা থৈ থৈ তাতা থৈথৈ।
কী আনন্দ, কী আনন্দ, কী আনন্দ—
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ,
সে তরঙ্গে ছুটি রঙ্গে পাছে পাছে
তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ তাতা থৈথৈ॥
ঠাকুরদা। যাও যাও ভাই, তোমরা নেচে বেড়াও গে, নাচিয়ে বেড়াও গে যাও।
প্রথম। ঠাকুরদা, আমাদের রাজা নেই এ কথা দুশো বার বলব।
ঠাকুরদা। কেবলমাত্র দুশো বার? এত কঠিন সংযমের দরকার কী—পাঁচশো বার বল্-না।
দ্বিতীয়। ফাঁকি দিয়ে কতদিন তোমরা মানুষকে ভুলিয়ে রাখবে।
ঠাকুরদা। নিজেও ভুলেছি ভাই।
তৃতীয়। আমরা চারি দিকে প্রচার করে বেড়াব, আমাদের রাজা নেই।
ঠাকুরদা। কার সঙ্গে ঝগড়া করবে বলো। তোমাদের রাজা তো কারো কানে ধরে বলছেন না ‘আমি আছি’। তিনি তো বলেন, তোমরাই আছ। তাঁর সবই তো তোমাদেরই জন্যে।
প্রথম। এই তো, আমরা রাস্তা দিয়ে চেঁচিয়ে যাচ্ছি— ‘রাজা নেই’। যদি রাজা থাকে সে কী করতে পারে করুক-না।
ঠাকুরদা। কিচ্ছু করবে না।
দ্বিতীয়। আমার পঁচিশ বছরের ছেলেটা সাত দিনের জ্বরে মারা গেল। দেশে যদি ধর্মের রাজা থাকবে তবে কি এমন অকালমৃত্যু ঘটে।
ঠাকুরদা। ওরে, তবু তো এখনো তোর দু ছেলে আছে— আমার যে একে একে পাঁচ ছেলে মারা গেল, একটি বাকি রইল না।
তৃতীয়। তবে?
ঠাকুরদা। তবে কী রে। ছেলে তো গেলই, তাই বলে কি ঝগড়া করে রাজাকেও হারাব। এমনি বোকা!
প্রথম। ঘরে যাদের অন্ন জোটে না তাদের আবার রাজা কিসের!
ঠাকুরদা। ঠিক বলেছিস ভাই। তা সেই অন্ন-রাজাকেই খুঁজে বের কর্ ! ঘরে বসে হাহাকার করলেই তো তিনি দর্শন দেবেন না।
দ্বিতীয়। আমাদের রাজার বিচারটা কিরকম দেখো না। ঐ আমাদের ভদ্রসেন, রাজা বলতে সে একেবারে অজ্ঞ।ন হয়ে পড়ে, কিন্তু তার ঘরের এমন দশা যে চামচিকেগুলোরও থাকবার কষ্ট হয়।
ঠাকুরদা। আমার দশাটাই দেখ্-না। রাজার দরজায় সমস্ত দিনই তো খাটছি— আজ পর্যন্ত দুটো পয়সা পুরস্কার মিলল না।
তৃতীয়। তবে?
ঠাকুরদা। তবে কী রে। তাই নিয়েই তো আমার অহংকার। বন্ধুকে কি কেউ কোনোদিন পুরস্কার দেয়। তা, যা ভাই, আনন্দ করে বলে বেড়া গে— রাজা নেই। আজ আমাদের নানা সুরের উৎসব— সব সুরই ঠিক এক তানে মিলবে।