সুন্দর
কবে তুমি আসবে বলে রইব না বসে, আমি চলব বাহিরে।
শুকনো ফুলের পাতাগুলি পড়তেছে খসে, আর সময় নাহি রে।
বাতাস দিল দোল, দিল দোল;
ও তুই     ঘাটের বাঁধন খোল্‌, ও তুই খোল্‌।
মাঝ-নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে তরী বাহি রে॥
আজ     শুক্লা একাদশী, হেরো নিদ্রাহারা শশী
ওই      স্বপ্নপারাবারের খেয়া একলা চালায় বসি।
তোর      পথ জানা নাই, নাইবা জানা নাই—
ও তোর   নাই মানা নাই, মনের মানা নাই—
সবার সাথে চলবি রাতে সামনে চাহি রে।

নুটু। কিন্তু রানী এখনো তো সাড়া পাচ্ছি নে।

অমিতা। নিশ্চয় পাচ্ছি। বুঝতে সময় লাগে— ভুল বুঝেই কত দিন কেটে যায়।

নুটু। যদি ভুল বুঝি যে সে কি আমার দোষ? ভোলান কেন?

অমিতা। ভুল ভাঙাবার সুখ দেবেন বলে। ওই যে শুকনো পাতা ছড়িয়ে চলেছেন তুই শুধু কি তাই দেখবি।

নুটু। যা চোখের সামনে দেখান তাই দেখি।

অমিতা। যা চোখের সামনে দেখান তাই দেখি।

অমিতা। যা চোখের সামনে দেখান না, তাই আরো বেশি করে দেখবার। মন দিয়ে একবার চেয়ে দেখ— ঐ শুকনো পাতার আবরণ এখনি খসবে— চিরনবীন ওরই আঁড়াল থেকে দেখা দেন। ওগো কিশোরের দল ধরো তো—

শুকনো পাতা কে যে ছড়ায় ওই দূরে উদাস করা কোন্‌ সুরে॥
ঘরছাড়া ওই কে বৈরাগী      জানি না যে কাহার লাগি
ক্ষণে ক্ষণে শূন্যে বনে যায় ঘুরে॥
চিনি চিনি যেন ওরে হয় মনে,
ফিরে ফিরে যেন দেখা ওর সনে।
ছদ্মবেশে কেন খেলো জীর্ণ এ বাস ফেলো—
প্রকাশ করো চিরনূতন বন্ধুরে॥


নুটু। রানী, ছদ্মবেশ ঘোচে, মায়া কাটে,দেখাও দেন। কিন্তু সব চেয়ে দুঃখ যে সম্পূর্ণ করে ধরা দেন না।

অমিতা। এই তো প্রেমের খেলা। পাওয়া আর না পাওয়ার দোল— এই হল দোলপূর্ণিমার দোল। সত্য আর মায়ার একসঙ্গে লীলা।

নুটু। এমন লীলায় ফল কী!

অমিতা। যেদিন দিয়ে তিনি চলে চলে যান সেই ব্যথার পথেই আমাদের এগিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান। সুমনা, সুন্দরের বিদায়ের পালা এবার শুরু হোক।