ভগ্নহৃদয়
কবিরে চৌদিকে যেন থাকে আবরিয়া।
মনে মনে মন যেন কাঁদিয়া দু-করে
কবির চরণ দুটি জড়াইয়া ধরে,
আঁখি মুদি “কবি! কবি!” বলে শতবার—
শতবার কেঁদে বলে “আমার! আমার!”
‘আমার আমার’ যেন বলিতে বলিতে
চাহে মন একেবারে জীবন ত্যজিতে!
সুখেতে কি দুখে যেন ফেটে যায় বুক—
সুখ বলে দুখ আমি, দুখ বলে সুখ।
কোথা কবি, কোথা আমি! সে যে গো দেবতা—
তারে কি কহিতে পারি প্রণয়ের কথা?
কবি যদি ভুলে কভু মোরে ভালোবাসে
তা হলে যে ম’রে যাব সঙ্কোচে উল্লাসে।
চাই না চাই না আমি প্রণয় তাঁহার,
যাহা পাই তাই ভালো স্নেহসুধাধার।
শুকতারা স্নেহমাখা করুণ নয়ানে
চেয়ে থাকে অস্তমান যামিনীর পানে,
তেমনি চাহেন যদি কবি স্নেহভরে
মুরলার ক্ষুদ্র এই হৃদয়ের ’পরে
তাহা হলে নয়নের সামনে তাঁহার
হাসিয়ে ফুরায়ে যাবে জীবন আমার।
অনিল।     স্বার্থপর, আপনারি ভাবভরে ভোর,
আজিও সে দেখিল না হৃদয়টি তোর?
সর্বস্ব তাহারি পদে দিয়া বিসর্জন
কাঁদিয়া মরিছে এক দীনহীন মন,
ইহাও কি পড়িল না নয়নে তাহার?
আপনারে ছাড়া কেহ নাহি দেখিবার?
নিশ্চয় দেখেছে, তবু দেখেও দেখে নি।
দেখেছে সে— নিরুপায় নিতান্তই অসহায়
ভালোবাসিয়াছে এক অভাগা রমণী।
দেখেছে— হৃদয় এক ফাটিয়া নীরবে
একান্ত মরিবে, তবু কথা নাহি কবে!