মালিনী
মিনতি আমার; আজি মোর কিছু নাহি।
রিক্ত চিত্ত মাঝে মাঝে ভরিবারে চাহি—
বিশ্রাম প্রার্থনা করি ঘুচাতে জড়তা।
[ প্রতিহারীর প্রস্থান
সুপ্রিয়ের প্রতি
যে কথা শুনাতেছিলে কহো সেই কথা,
আপন কাহিনী। শুনিয়া বিস্ময় লাগে,
নূতন বারতা পাই, নবদৃশ্য জাগে
চক্ষে মোর। তোমাদের সুখদুঃখ যত,
গৃহের বারতা সব, আত্মীয়ের মতো
সকলি প্রত্যক্ষ যেন জানিবারে পাই।
ক্ষেমংকর বান্ধব তোমার?
সুপ্রিয়। বন্ধু, ভাই,
প্রভু। সূর্য সে আমার, আমি তার রাহু,
আমি তার মহামোহ। বলিষ্ঠ সে বাহু,
আমি তাহে লৌহপাশ। বাল্যকাল হতে
দৃঢ় সে অটলচিত্ত, সংশয়ের স্রোতে
আমি ভাসমান। তবু সে নিয়ত মোরে
বন্ধুমোহে বক্ষোমাঝে রাখিয়াছে ধরে
প্রবল অটল প্রেমপাশে, নিঃসন্দেহে
বিনা পরিতাপে, চন্দ্রমা যেমন স্নেহে
সহাস্যে বহন করে কলঙ্ক অক্ষয়
অনন্ত ভ্রমণপথে। ব্যর্থ নাহি হয়
বিধির নিয়ম কভু— লৌহময় তরী
হোক-না যতই দৃঢ়, যদি রাখে ধরি
বক্ষতলে ক্ষুদ্র ছিদ্রটিরে, এক দিন
সংকটসমুদ্রমাঝে উপায়বিহীন
ডুবিতে হইবে তারে। বন্ধু চিরন্তন,
তোমারে ডুবাব আমি, ছিল এ লিখন।
মালিনী। ডুবায়েছ তারে?
সুপ্রিয়। দেবী, ডুবায়েছি তারে।