ভগ্নহৃদয়
নিতান্তই পদতলে পড়ে থাকে বটে!
সখা, তাই কি গো তারে তুলিয়া উঠাবে না রে,
বারেক রাখিবে নাকি বুকের নিকটে!
লতা আজ লুটাইয়া আছে পদমূলে,
মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে— আপনারে ভুলে—
প্রাণপণে ভালোবেসে      জড়ায়ে জড়ায়ে শেষে
এক দিন উঠিবে সে বুকে মাথা তুলে,
শাখাটি বাঁধিতে দিবে আলিঙ্গনে তার,
দুখিনীর সে আশা কি বড়ো অহঙ্কার?
কি করেছি অপরাধ বুঝিতে না পারি!
দিন রাত্রি, সখা, আমি রয়েছি তোমারি—
কিসে তুমি ভালো রবে, কিসে তুমি সুখী হবে,
দিন রাত সে ভাবনা জাগিছে অন্তরে!
মুহূর্ত ভাবি না আমি আপনার তরে।
তারি বিনিময়ে কি গো এত অনাদর!
শতখানা ফেটে যায় বুকের ভিতর।
সখা, আমি অভিমান কভু করি নাই—
মনে করিতেও তাহা লাজে মরে যাই।
ধীরে ধীরে এনে কাছে     মনে মনে হাস পাছে—
“দুখিনী ললিতা সেও অভিমান করিয়াছে!”
তাই অভিমান কভু মনেও না ভায়,
অশ্রুজল হেরে পাছে হাসি তব পায়!
বুকে বড়ো ব্যথা বাজে,     তাই ভাবি মাঝে মাঝে
ভিক্ষুকের মতো গিয়া পড়ি তব পায়—
কেঁদে গিয়ে ভিক্ষা করিয়া বিনয়,
“সর্বস্ব দিয়েছি ওগো— পরান হৃদয়—
হৃদয় দিয়েছি বলে     হৃদয় চাহি না ভুলে—
একটু ভালোবাসিও, আর কিছু নয়!”
পাছে গো চাহিলে ভিক্ষা, ধরিলে চরণে,
বিরক্ত বা হও তাই ভয় করি মনে।
তবে গো কি হবে মোর! জানাব কি করে?
এমন ক’দিন আর রব প্রাণ ধরে?