ভগ্নহৃদয়
সমস্ত দিনের পরে      কবি তোর এল ঘরে—
প্রশান্ত মুখানি কেন দেখি না তোমার?
ওই তো দ্বারের কাছে      দীপটি জ্বালানো আছে,
আসন আমার ওই রেখেছিস পেতে—
আমি ভালোবাসি ব’লে      যতনে আনিয়া তুলে
রজনীগন্ধার মালা দিয়েছিস গেঁথে!
কিন্তু রে দেখি না কেন তোর মুখখানি?
শত শত বার ক’রে      ভ্রমিতেছি ঘরে ঘরে—
কোথাও বসিতে নারি, শান্তি নাহি মানি!
হুহু করি উঠিতেছে সন্ধ্যার বাতাস,
প্রতি ঘরে ভ্রমিতেছে করি হাহুতাশ!
কাঁপে দীপাশিখা তাহে,      নিভিয়া যাইতে চাহে—
প্রাচীরে চমকি উঠে ছায়ার আঁধার!
সে মুখ দেখি নে কেন?সে স্বর শুনি নে কেন?
প্রাণের ভিতরে কেন করে হাহাকার?
জানি না হৃদয়খানা ফাটিয়া কেন রে
আঁখি হতে শতধারে অশ্রুবারি ঝরে?
কে যেন প্রাণের কাছে     কী-জানি-কী বলিতেছে,
কী-জানি-কী ভাবিতেছি ভাবিয়া না পাই!
কোথা যাই— কোথা যাই—বল্‌ কোথা যাই!
মুরলা রে—মুরলা, কোথায়?
কোথায় গেলি রে বালা? কোথায়? কোথায়?


চপলার প্রবেশ
চপলা।      কবি গো, কোথায় গেল মুরলা আমার?
দারুণ মনের জ্বালা      আর সহিল না বালা—
বুঝি চ’লে গেল তাই, ফিরিবে না আর!
বুঝি সে মুরলা মোর, সমস্ত হৃদয়
তোমারে সঁপিয়াছিল— আর কারে নয়।
বুঝি-বা সে ভালো ক’রে পেলে না আদর,
কাঁদিয়া চলিয়া গেল দূর দেশান্তর।