ভগ্নহৃদয়
অবসন্ন এ মাথা যে পারি নে তুলিতে,
একবার রাখ সখা, রাখ ও কোলেতে!
নিতান্তই স্বার্থপর হৃদয় আমার,
অতি নীচ হীন হৃদি এই মুরলার—
নির্দয়— নির্দয় বড়ো— পাষাণ হতেও দড়,
ধূলি হতে লঘুতর হৃদয় আমার?
নহিলে কী করে আমি, কবি, কবি মোর,
(হৃদয়ে ঘনায়ে ছিল কি মোহের ঘোর!)
স্নেহময় তোমারেও ত্যজি অনায়াসে
কি ক’রে আইনু চলি এ দূর প্রবাসে?
ও করুণ নয়নের অশ্রুবারিধার
একবারো মনে নাহি পড়িল আমার?
অমন স্নেহের পানে ফিরে না চাহিয়ে
পারিনু আঘাত দিতে ও কোমল হিয়ে?
মার্জনা করিও এই অপরাধ তার,
কবি মোর, শেষ ভিক্ষা এই মুরলার!
এমন দুর্বল হৃদি, এত নীচ, হীন,
এমন পাষাণে গড়া, এতই সে দীন,
এ যে চিরকাল ধ’রে ছিল তব কাছে
এ অপরাধের, কবি, মার্জ্জনা কি আছে?
সখা, অপরাধ সারা অস্তিত্ব তাহার—
মরণে করিবে আজি প্রায়শ্চিত্ত তার!
কেন আজ মুখখানি শীর্ণ ও মলিন—
বড়ো যেন শ্রান্ত দেহ, অতি বলোহীন—
রাখ কবি, মাথা রাখ,      এই বুকে মাথা রাখ,
একটু বিশ্রাম কর হৃদয়ে আমার!
ছি ছি সখা, কেঁদো নাকো,     মুরলার কথা রাখো—
ও মুখে দেখিতে নারি অশ্রুবারিধার!
কবি।      এত দিন এত কাছে ছিনু এক ঠাঁই,
মিলনের অবসর মোরা পাই নাই।
কে জানিত ভাগ্যে, সখি, ঘটিবে এমন
মরণের উপকূলে হইবে মিলন!