প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “অর্থাৎ, শশিমুখীকে তোর ঘরের বউ না করে তোরা ঘরের শিকল করত চাস— শশীর কী সুখেরই কপাল!”
এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল, পরেশবাবুর বাড়ির দুই মেয়ে আসিয়াছেন। শুনিয়া বিনয়ের বুকের মধ্যে ধড়াস করিয়া উঠিল। তাহার মনে হইল, বিনয়কে সতর্ক করিয়া দিবার জন্য তাহারা আনন্দময়ীর কাছে নালিশ জানাইতে আসিয়াছে। সে একেবারে দাঁড়াইয়া উঠিয়া কহিল, “আমি যাই মা!”
আনন্দময়ী উঠিয়া দাঁড়াইয়া তাহার হাত ধরিয়া কহিলেন, “একেবারে বাড়ি ছেড়ে যাস নে বিনয়! নীচের ঘরে একটু অপেক্ষা কর্।”
নীচে যাইতে যাইতে বিনয় বার বার বলিতে লাগিল, ‘এর তো কোনো দরকার ছিল না। যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তো মরে গেলেও আর সেখানে যেতুম না। অপরাধের শাস্তি আগুনের মতো যখন একবার জ্বলে ওঠে তখন অপরাধী দগ্ধ হয়ে ম'লেও সেই শাস্তির আগুন যেন নিবতেই চায় না।’
একতলায় রাস্তার ধারে গোরার যে ঘর ছিল সেই ঘরে বিনয় যখন প্রবেশ করিতে যাইতেছে এমন সময় মহিম তাঁহার স্ফীত উদরটিকে চাপকানের বোতাম-বন্ধন হইতে মুক্তি দিতে দিতে আপিস হইতে বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। বিনয়ের হাত ধরিয়া কহিলেন, “এই-যে বিনয়! বেশ! আমি তোমাকে খুঁজছি।”
বলিয়া বিনয়কে গোরার ঘরের মধ্যে লইয়া গিয়া একটা চৌকিতে বসাইয়া নিজেও বসিলেন এবং পকেট হইতে ডিবা বাহির করিয়া বিনয়কে একটি পান খাইতে দিলেন।
“ওরে তামাক নিয়ে আয় রে” বলিয়া একটা হুংকার দিয়া তিনি একেবারেই কাজের কথা পাড়িলেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, “সেই বিষয়টার কী স্থির হল? আর তো— ”
দেখিলেন বিনয়ের ভাবখানা পূর্বের চেয়ে অনেকটা নরম। খুব যে একটা উৎসাহ তাহা নয় বটে, কিন্তু ফাঁকি দিয়া কোনোমতে কথাটাকে এড়াইবার চেষ্টাও দেখা যায় না। মহিম তখনই দিন-ক্ষণ একেবারে পাকা করিতে চান; বিনয় কহিল, “গোরা ফিরে আসুক-না।”
মহিম আশ্বস্ত হইয়া কহিলেন,“সে তো আর দিন কয়েক আছে। বিনয়, কিছু জলখাবার আনতে বলে দিই— কী বল? তোমার মুখ আজ ভারি শুকনো দেখাচ্ছে যে! কিছু অসুখ-বিসুখ করে নি তো?”
জলখাবারের দায় হইতে বিনয় নিষ্কৃতি লাভ করিলে মহিম নিজের ক্ষুধানিবৃত্তির অভিপ্রায়ে বাড়ির ভিতর গমন করিলেন। বিনয় গোরার টেবিলের উপর হইতে যে-কোনো একখানা বই টানিয়া লইয়া পাতা উলটাইতে লাগিল, তাহার পরে বই ফেলিয়া ঘরের এক ধার হইতে আর-এক ধার পর্যন্ত পায়চারি করিতে থাকিল।
বেহারা আসিয়া কহিল, “মা ডাকছেন।”
বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “কাকে ডাকছেন?”
বেহারা কহিল, “আপনাকে।”
বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “আর-সকলে আছেন?”
বেহারা কহিল, “আছেন।”
পরীক্ষাঘরের মুখে ছাত্র যেমন করিয়া যায় বিনয় তেমনি করিয়া উপরে চলিল। ঘরের দ্বারের কাছে আসিয়া একটু ইতস্তত