বাঁশরি

ক্ষিতিশ। এর উপায়?

বাঁশরি। লেখো, লেখো সত্যি করে, লেখো শক্ত করে। মন্তর নয়, মাইথলজি নয়, মিনর্ভার মুখোশটা ফেলে দাও টান মেরে। ঠোঁট লাল ক’রে তোমাদের পানওয়ালী যে-মন্তর ছড়ায় ঐ আশ্চর্য মেয়েও ভাষা বদলিয়ে সেই মন্তরই ছড়াচ্ছে। সামনে পড়ল পথ-চলতি এক রাজা, শুরু করলে জাদু। কিসের জন্যে। টাকার জন্যে। শুনে রাখো, টাকা জিনিসটা মাইথলজির নয়, ওটা ব্যাঙ্কের, ওটা তোমাদের রিয়লিজ্‌মের কোঠায়।

ক্ষিতিশ। টাকার প্রতি দৃষ্টি আছে সেটা তো বুদ্ধির লক্ষণ, সেইসঙ্গে হৃদয়টাও থাকতে পারে।

বাঁশরি। আছে গো, হৃদয় আছে। ঠিক জায়গায় খুঁজলে দেখতে পাবে, পানওয়ালীরও হৃদয় আছে। কিন্তু মুনাফা এক দিকে, হৃদয়টা আর-এক দিকে। এইটে যখন আবিষ্কার করবে তখনই জমবে গল্পটা। পাঠিকারা ঘোর আপত্তি করবে; বলবে, মেয়েদের খেলো করা হল, অর্থাৎ তাদের মন্ত্রশক্তিতে বোকাদের মনে খটকা লাগানো হচ্ছে। উঁচুদরের পুরুষ পাঠকও গাল পাড়বে। বল কী, তাদের মাইথলজির রঙ চটিয়ে দেওয়া! সর্বনাশ! কিন্তু ভয় কোরো না ক্ষিতিশ, রঙ যখন যাবে জ্বলে, মন্ত্র পড়বে চাপা, তখনো সত্য থাকবে টিঁকে, শেলের মতো, শূলের মতো।

ক্ষিতিশ। শ্রীমতী সুষমার হৃদয়ের বর্তমান ঠিকানাটা জানতে পারি কি।

বাঁশরি। ঠিকানা বলতে হবে না, নিজের চোখেই দেখতে পাবে যদি চোখ থাকে। এখন চলো ঐ দিকে। ওরা টেনিস-খেলা সেরে এসেছে। এখন আইস্‌ক্রীম পরিবেশনের পালা। বঞ্চিত হবে কেন।

[ উভয়ের প্রস্থান


তৃতীয় দৃশ্য
বাগানের এক দিক। খাবার-টেবিল ঘিরে বসে আছে তারক, শচীন, সুধাংশু, সতীশ ইত্যাদি।

তারক। বাড়াবাড়ি হচ্ছে সন্ন্যাসীকে নিয়ে। নাম পুরন্দর নয়, সবাই জানে। আসল নাম ধরা পড়লেই বোকার ভিড় পাতলা হয়ে যেত। দেশী কি বিদেশী তা নিয়েও মতভেদ। ধর্ম কী জিজ্ঞাসা করলে হেসে বলে, ধর্মটা এখনো মরে নি তাই তাকে নামের কোঠায় ঠেসে দেওয়া চলে না। সেদিন দেখি, আমাদের হিমুকে গল্‌ফ শেখাচ্ছে। হিমুর জীবাত্মাটা কোনোমতে গল্‌‍ফের গুলির পিছনেই ছুটতে পারে, তার বেশি ওর দৌড় নেই, তাই সে ভক্তিতে গদ্‌গদ। মিস্টিরিয়স সাজের নানা মালমশলা জুটিয়েছে। আজ ওকে আমি একস্‌‍পোজ করব সবার সামনে, দেখে নিয়ো।

সুধাংশু। প্রমাণ করবে, তোমার চেয়ে যে বড়ো সে তোমার চেয়ে ছোটো!

সতীশ। আঃ সুধাংশু, মজাটা মাটি করিস কেন। পকেট বাজিয়ে ও বলছে ডক্যুমেণ্ট্‌ আছে। বের করুকনো, দেখি কী রকম চীজ সেটা। ঐ যে সন্ন্যাসী, সঙ্গে আসছেন এঁরা সবাই।

পুরন্দরের প্রবেশ
ললাট উন্নত, জ্বলছে দুই চোখ, ঠোঁটে রয়েছে অনুচ্চারিত অনুশাসন, মুখের স্বচ্ছ রঙ পাণ্ডুর শ্যাম, অন্তর থেকে বিচ্ছুরিত দীপ্তিতে ধৌত। দাড়ি-গোঁফ কামানো, সুডৌল মাথায় ছোটো করে ছাঁটা চুল, পায়ে নেই জুতো, তসরের ধুতি পরা, গায়ে খয়েরি রঙের ঢিলে জামা। সঙ্গে সুষমা, সোমশংকর, বিভাসিনী।

শচীন। সন্ন্যাসীঠাকুর, বলতে ভয় করি, কিন্তু চা খেতে দোষ কী।