প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
পুরন্দর। কিছুমাত্র না। যদি ভালো চা হয়। আজ থাক্, এইমাত্র নেমন্তন্ন খেয়ে আসছি।
শচীন। নেমন্তন্ন আপনাকেও? লাঞ্চে নাকি। গ্রেট্ইস্টার্নে বোষ্টমের মোচ্ছব!
পুরন্দর। গ্রেট্ইস্টার্নেই যেতে হয়েছিল। ডাক্তার উইল্কক্সের ওখানে।
শচীন। ডাক্তার উইল্কক্স! কী উপলক্ষ্যে।
পুরন্দর। যোগবাশিষ্ঠ পড়ছেন।
শচীন। বাস্ রে! ওহে তারক, এগিয়ে এসো-না।–কী-যে বলছিলে।
তারক। এই ফোটোগ্রাফটা তো আপনার?
পুরন্দর। সন্দেহ মাত্র নেই।
তারক। মোগলাই সাজ, সামনে গুড়্গুড়ি, পাশে দাড়িওয়ালাটা কে। সুস্পষ্ট যাবনিক।
পুরন্দর। রোশেনাবাদের নবাব। ইরানী বংশীয়। তোমার চেয়ে এঁর আর্যরক্ত বিশুদ্ধ।
তারক। আপনাকে কেমন দেখাচ্ছে যে!
পুরন্দর। দেখাচ্ছে তুর্কির বাদশার মতো। নবাবসাহেব ভালোবাসেন আমাকে, আদর করে ডাকেন মুক্তিয়ার মিঞা, খাওয়ান এক থালায়। মেয়ের বিয়ে ছিল, আমাকে সাজিয়েছিলেন আপন বেশে।
তারক। মেয়ের বিয়েতে ভাগবতপাঠ ছিল বুঝি?
পুরন্দর। ছিল পোলোখেলার টুর্নামেণ্ট্। আমি ছিলুম নবাবসাহেবের আপন দলে।
তারক। কেমন সন্ন্যাসী আপনি।
পুরন্দর। ঠিক যেমনটি হওয়া উচিত। কোনো উপাধিই নেই, তাই সব উপাধিই সমান খাটে। জন্মেছি দিগম্বর বেশে, মরব বিশ্বাম্বর হয়ে। তোমার বাবা ছিলেন কাশীতে হরিহর তত্ত্বরত্ন, তিনি আমাকে যে-নামে জানতেন সে নাম গেছে ঘুচে। তোমার দাদা রামসেবক বেদান্তভূষণ কিছুদিন পড়েছেন আমার কাছে বৈশেষিক। তুমি তারক লাহিড়ি, তোমার নাম ছিল বুকু, আজ শ্বশুরের সুপারিসে কক্স্হিল সাহেবের অ্যাটর্নি-অফিসে শিক্ষানবিশ। সাজ বদলেছে, তোমার, তারক নামের আদ্যক্ষরটা তবর্গ থেকে টবর্গে চড়েছে। শুনেছি যাবে বিলেতে। বিশ্বনাথের বাহনের প্রতি দয়া রেখো।
তারক। ডাক্তার উইল্কক্সের কাছ থেকে কি ইণ্ট্রোডাক্শন চিঠি পাওয়া যেতে পারবে?
পুরন্দর। পাওয়া অসম্ভব নয়।
তারক। মাপ করবেন।
বাঁশরি। সুষমার মাষ্টারিতে আজ ইস্তফা দিতে এসেছেন?
পুরন্দর। কেন দেব। আরো-একটি ছাত্র বাড়ল।
বাঁশরি। শুরু করাবেন মুগ্ধবোধের পাঠ? মুগ্ধতার তলায় ডুবছে যে মানুষটা হঠাৎ তার বোধোদয় হলে নাড়ি ছাড়বে।
পুরন্দর। (কিছুক্ষণ বাঁশরির মুখের দিকে তাকিয়ে) বৎসে, একেই বলে ধৃষ্টতা।
বিভাসিনী। সময় হয়েছে। ঘরের মধ্যে সভা প্রস্তুত, চলুন সকলে।