বাঁশরি
সকলের ঘরে প্রবেশ
দরজা পর্যন্ত গিয়ে বাঁশরি থমকে দাঁড়াল

ক্ষিতিশ। তুমি যাবে না ঘরে?

বাঁশরি। সস্তাদরের সদুপদেশ শোনবার শখ আমার নেই।

ক্ষিতিশ। সদুপদেশ!

বাঁশরি। এই তো সুযোগ। পালাবার রাস্তা বন্ধ। জালিয়ানওয়ালাবাগের মার।

ক্ষিতিশ। আমি একবার দেখে আসিগে।

বাঁশরি। না। শোনো, প্রশ্ন আছে। সাহিত্যসম্রাট, গল্পটার মর্ম যেখানে সেখানে পৌঁচেছে তোমার দৃষ্টি?

ক্ষিতিশ। আমার হয়েছে অন্ধ-গোলাঙ্গুল ন্যায়। লেজটা ধরেছি চেপে, বাকিটা টান মেরেচে আমাকে কিন্তু চেহারা রয়েছে অস্পষ্ট। মোট কথাটা এই বুঝেছি যে, সুষমা বিয়ে করবে রাজাবাহাদুরকে, পাবে রাজৈশ্বর্য, তার বদলে হাতটা দিতে প্রস্তুত, হৃদয়টা নয়।

বাঁশরি। তবে শোনো বলি। সোমশংকর নয় প্রধান নায়ক, এ কথা মনে রেখো।

ক্ষিতিশ। তাই নাকি। তা হলে অন্তত গল্পটার ঘাট পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও। তার পরে সাঁতরিয়ে হোক,খেয়া ধরে হোক, পারে পৌঁছব।

বাঁশরি। হয়তো জান পুরন্দর তরুণসমাজে বিনা মাইনেয় মাস্টারি করেন। পরীক্ষায় উৎরিয়ে দিতে অদ্বিতীয়। কড়া বাছাই করে নেন ছাত্র। ছাত্রী পেতে পারতেন অসংখ্য, কিন্তু বাছাইরীতি এত অসম্ভব কঠিন যে, এতদিনে একটিমাত্র পেয়েছেন, তার নাম শ্রীমতী সুষমা সেন।

ক্ষিতিশ। ছাত্রী যাদের ত্যাগ করেছেন তাদের কী দশা।

বাঁশরি। আত্মহত্যার সংখ্যা কত, খবর পাই নি। এটা জানি, তাদের অনেকেই চঞ্চু মেলে চেয়ে আছে ঊর্ধ্বে।

ক্ষিতিশ। সেই চকোরীর দলে নাম লেখাও নি?

বাঁশরি। তোমার কী মনে হয়।

ক্ষিতিশ। আমার মনে হয় চকোরীর জাত তোমার নয়, তুমি মিসেস্‌ রাহুর পদের উমেদার। যাকে নেবে তাকে দেবে লোপ করে, শুধু চঞ্চু মেলে তাকিয়ে থাকা নয়।

বাঁশরি। ধন্য! নরনারীর ধাত বুঝতে পয়লা নম্বর, গোল্ড্‌ মেডালিস্ট্‌। লোকে বলে নারীস্বভাবের রহস্যভেদ করতে হার মানেন স্বয়ং নারীর সৃষ্টিকর্তা পর্যন্ত, কিন্তু তুমি নারীচরিত্রচারণচক্রবর্তী, নমস্কার তোমাকে।

ক্ষিতিশ। (করজোড়ে) বন্দনা সারা হল, এবার বর্ণনার পালা শুরু হোক।

বাঁশরি। এটা আন্দাজ করতে পার নি যে, সুষমা ঐ সন্ন্যাসীর ভালোবাসায় একেবারে শেষ-পর্যন্ত তলিয়ে গেছে?

ক্ষিতিশ। ভালোবাসা না ভক্তি?

বাঁশরি। চরিত্রবিশারদ, লিখে রাখো, মেয়েদের যে ভালোবাসা পৌঁছয় ভক্তিতে সেটা তাদের মহাপ্রয়াণ -সেখান থেকে ফেরবার রাস্তা নেই। অভিভূত যে পুরুষ ওদের সমান প্ল্যাটফর‍্‌মে নামে সেই গরিবের জন্য থার্ডক্লাস, বড়োজোর ইণ্টার মীডিয়েট। সেলুনগাড়ি তো নয়ই। যে উদাসীন মেয়েদের মোহে হার মানল না, ওদের ভুজপাশের দিগ্‌বলয় এড়িয়ে যে উঠল মধ্যগগনে, দুই হাত ঊর্ধ্বে তুলে