মালঞ্চ
আমার কাছে চিতাশয্যা হয়ে উঠেছে। যদি ফিরে না আসেন, এ রাত্তির কাটবে না, বুক ফেটে মরে যাব। অমনি ডেকে এনো সরলাকে, আমি শেল উপড়ে ফেলব বুকের থেকে, ভয় পাব না, এই তোমাকে বলছি নিশ্চয় করে।

রমেন। সময় হয় নি বউদি, আজ থাক।

নীরজা। সময় যায় পাছে এই ভয়। এক্ষনি ডেকে আনো।


পরমহংসদেবের ছবির দিকে তাকিয়ে দু হাত জোড় করে

বল দাও ঠাকুর, বল দাও, মুক্তি দাও মতিহীন অধম নারীকে। আমার দুঃখ আমার ভগবানকে ঠেকিয়ে রেখেছে, পূজা অর্চনা সব গেল আমার। ঠাকুরপো একটা কথা বলি, আপত্তি কোরো না।

রমেন। কী বলো।

নীরজা। একবার আমাকে ঠাকুর-ঘরে যেতে দাও দশ মিনিটের জন্যে, তা হলে আমি বল পাব। কোনো ভয় থাকবে না।

রমেন। আচ্ছা যাও, আপত্তি করব না।

নীরজা। আয়া—

আয়ার প্রবেশ

রোশনি। কী খোঁখী।

নীরজা। ঠাকুর-ঘরে নিয়ে চল আমাকে।

রোশনি। সে কী কথা! ডাক্তারবাবু—

নীরজা। ডাক্তারবাবু যমকে ঠেকাতে পারবে না, আর আমার ঠাকুরকে ঠেকাবে?

রমেন। আয়া, তুমি ওঁকে নিয়ে যাও। ভয় নেই, ভালোই হবে।

[আয়া-সহ নীরজার প্রস্থান
আদিত্যের প্রবেশ

আদিত্য। এ কী, নীরু ঘরে নেই কেন?

রমেন। এখুনি আসবেন, তিনি ঠাকুর-ঘরে গেছেন।

আদিত্য। ঠাকুর-ঘরে? ঘর তো কাছে নয়। ডাক্তারের নিষেধ আছে যে!

রমেন। শুনো না দাদা। ডাক্তারের ওষুধের চেয়ে কাজে লাগবে। একবার কেবল ফুলের অঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করেই চলে আসবেন।

আদিত্য। রমেন, তুমি আমাদের সব কথা জানো আমি জানি।

রমেন। হাঁ, জানি।

আদিত্য। আজ চুকিয়ে দেব সব, আজ পরদা ফেলব উঠিয়ে।

রমেন। তুমি তো একলা নও দাদা। বোঝা ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেললেই তো হল না। বউদি রয়েছেন ও দিকে। সংসারের গ্রন্থি জটিল।