শেষ বর্ষণ

হাসির কানায় কানায় ভরা কোন্‌ নয়নের জল।

       বাদল হাওয়ার দীর্ঘশ্বাসে

       যূথীবনের বেদন আসে,

ফুল-ফোটানোর খেলায় কেন ফুল-ঝরানোর ছল।

       কী আবেশ হেরি চাঁদের চোখে,

       ফেরে সে কোন স্বপনলোকে।

      মন বসে রয় পথের ধারে,

       জানে না সে পাবে কারে,

আসা-যাওয়ার আভাস ভাসে বাতাসে চঞ্চল।

রাজা। বেশ, বেশ, এটা মধুর লাগল বটে।

নটরাজ। কিন্তু মহারাজ, কেবলমাত্র মধুর? সেও তো অসম্পূর্ণ?

রাজা। ওই দেখো, যেমনি আমি বলেছি মধুর অমনি তার প্রতিবাদ। তোমাদের দেশে সোজা কথার চলন নেই বুঝি?

নটরাজ। মধুরের সঙ্গে কঠোরের মিলন হলে তবেই হয় হরপার্বতীর মিলন। সেই মিলনের গানটা ধরো।

 

     বজ্র-মানিক দিয়ে গাঁথা

         আষাঢ় তোমার মালা।

    তোমার শ্যামল শোভার বুকে

         বিদ্যুতেরই জ্বালা।

    তোমার মন্ত্রবলে

         পাষাণ গলে, ফসল ফলে,

মরু বহে আনে তোমার পায়ে ফুলের ডালা।

     মরো মরো পাতায় পাতায়

         ঝরো ঝরো বারির রবে,

    গুরু গুরু মেঘের মাদল

        বাজে তোমার কী উৎসবে।

     সবুজ সুধার ধারায় ধারায়

        প্রাণ এনে দাও তপ্ত ধরায়,

    বামে রাখ ভয়ংকরী

        বন্যা মরণ-ঢালা।

রাজা। সব রকমের খ্যাপামিই তো হল। হাসির সঙ্গে কান্না, মধুরের সঙ্গে কঠোর, এখন বাকি রইল কী?

নটরাজ। বাকি আছে অকারণ উৎকণ্ঠা। কালিদাস বলেন, মেঘ দেখলে সুখী মানুষও আনমনা হয়ে যায়। এইবার সেই যে “অন্যথাবৃত্তি চেতঃ”, সেই যে পথ-চেয়ে-থাকা আনমনা, তারই গান হবে। নাট্যাচার্য, ধরো হে—