শেষ বর্ষণ

পুব হাওয়াতে দেয় দোলা আজ মরি মরি।

হৃদয়-নদীর কূলে কূলে জাগে লহরী।

      পথ চেয়ে তাই একলা ঘাটে

      বিনা কাজে সময় কাটে,

পাল তুলে ওই আসে তোমার সুরেরই তরী।

ব্যথা আমার কূল মানে না বাধা মানে না,

পরান আমার ঘুম জানে না জাগা জানে না।

      মিলবে যে আজ অকূল পানে,

      তোমার গানে আমার গানে,

ভেসে যাবে রসের বানে আজ বিভাবরী।

নটরাজ। বিরহীর বেদনা রূপ ধ’রে দাঁড়াল, ঘটবর্ষার মেঘ আর ছায়া দিয়ে গড়া সজল রূপ। অশান্ত বাতাসে ওর সুর পাওয়া গেল কিন্তু ওর বাণীটি আছে তোমার কণ্ঠে, মধুরিকা।

অশ্রুভরা বেদনা দিকে দিকে জাগে।

     আজি শ্যামল মেঘের মাঝে

      বাজে কার কামনা।

    চলিছে ছুটিয়া অশান্ত বায়,

ক্রন্দন কার তার গানে ধ্বনিছে,

করে কে সে বিরহী বিফল সাধনা।

রাজা। আর নয় নটরাজ, বিরহের পালাটাই বড়ো বেশি হয়ে উঠল, ওজন ঠিক থাকছে না।

নটরাজ। মহারাজ, রসের ওজন আয়তনে নয়। সমস্ত গাছ একদিকে, একটি ফুল একদিকে, তবু ওজন ঠিক থাকে। অসীম অন্ধকার একদিকে, একটি তারা একদিকে, তাতেও ওজনের ভুল হয় না। ভেবে দেখুন, এ সংসারে বিরহের সরোবর চারি দিকে ছলছল করছে, মিলনপদ্মটি তারই বুকের একটি দুর্লভ ধন।

রাজকবি। তাই না হয় হল কিন্তু অশ্রুবাষ্পের কুয়াশা ঘনিয়ে দিয়ে সেই পদ্মটিকে একেবারে লুকিয়ে ফেললে তো চলবে না।
নটরাজ। মিলনের আয়োজনও আছে। খুব বড়ো মিলন, অবনীর সঙ্গে গগনের। নাট্যাচার্য একবার শুনিয়ে দাও তো।

ধরণীর গগনের মিলনের ছন্দে

বাদল বাতাস মাতে মালতীর গন্ধে।

      উৎসবসভা-মাঝে

       শ্রাবণের বীণা বাজে,

    শিহরে শ্যামল মাটি প্রাণের আনন্দে।

দুই কূল আকুলিয়া অধীর বিভঙ্গে

নাচন উঠিল জেগে নদীর তরঙ্গে।

     কাঁপিছে বনের হিয়া