কালের যাত্রা
রথযাত্রা

আমার স্নেহাস্পদ ছাত্র শ্রীমান প্রমথনাথ বিশীর কোনো রচনা হইতে

এই নাট্যদৃশ্যের ভাবটি আমার মনে আসিয়াছিল।

 

১ নাগরিক। মহাকালের রথযাত্রায় এবার যে রথ অচল হয়ে রইল। কিছুতেই নড়লেন না। কার দোষে হল তা জানি, গণৎকার গুনে বলে দিয়েছেন।

২ নাগরিক। হয়তো কারো দোষ নেই, হয়তো মহাকাল ক্লান্ত, আর চলতে রাজি নন।

১ নাগরিক। আরে বল কী। চলতে রাজি না হলে আমাদের চলবে কী করে। ঐ দেখো-না, রথের দড়িটা পড়ে আছে, কত যুগের দড়ি — কত মানুষের হাত পড়েছে ঐ দড়িতে, এমন করে তো কোনোদিন ধুলোয় পড়ে থাকে নি।

৩ নাগরিক। রথ যদি না চলে, আর ঐ দড়ি পড়ে থাকে, তা হলে ও যে সমস্ত রাজ্যের গলায় দড়ি হবে।

৪ নাগরিক। বাবা রে, ঐ দড়িটা দেখে ভয় লাগছে, মনে হচ্ছে ও যেন ক্রমে ক্রমে সাপ হয়ে ফণা ধরে উঠবে।

৩ নাগরিক। দেখ্‌-না ভাই, একটু একটু যেন নড়ছে মনে হচ্ছে।

১ নাগরিক। আমরা যদি না নড়াতে পারি, ও যদি আপনি নড়ে ওঠে তা হলে যে সর্বনাশ হবে।

৩নাগরিক। তা হলে জগতের সব জোড়গুলো বিজোড় হয়ে উঠবে রে। তাহলে রথটা চলবে আমাদের বুকের পাঁজরের উপর দিয়ে। আমরা ওকে নিজে চালাই বলেই তো ওর চাকার তলায় পড়ি নে। এখন উপায়?

১ নাগরিক। ঐ দেখ্‌-না, পুরুতঠাকুর বসে মন্ত্র পড়ছে।

২নাগরিক। রথযাত্রায় সব আগেই ঐ পুরুতঠাকুরের দলরাই তো দড়ি ধরে প্রথম টানটা দিয়ে থাকেন। এবার কি শুধু মন্ত্র পড়েই কাজ সারবেন নাকি।

৪নাগরিক। চেষ্টার ত্রুটি হয় নি। ভোরের বেলা সেই অন্ধকার থাকতে সবার আগে ওঁরাই তো একচোট টানাটানি করে নিয়েছেন। কলিযুগে ওঁদের কি আর তেজ আছে রে।

৩ নাগরিক। ঐ দেখ্‌, আমার কেমন মনে হচ্ছে ঐ রশিটা যেন যুগ-যুগান্তরের নাড়ীর মতো দব্‌দব্‌ করছে।

১ নাগরিক। আমার মনে হচ্ছে ঐ রথ চলবে কোনো এক পুণ্যাত্মা মহাপুরুষের স্পর্শ পেলে।

২ নাগরিক। আরে, রথ চালাতে পুণ্যাত্মা মহাপুরুষের জন্যে বসে থাকলে শুভলগ্নও তো বসে থাকবে

না। ততক্ষণে আমাদের মতো পাপাত্মাদের দশা হবে কী।

১ নাগরিক। পাপাত্মাদের দশা কী হবে সেজন্য ভগবানের মাথাব্যথা নেই।

২ নাগরিক। বলিস কী রে। পুণ্যাত্মাদের জন্যে এ জগৎ তৈরি হয় নি। তা হলে যে আমরা অতিষ্ঠ হতুম। সৃষ্টিটা আমাদেরই জন্যে। দৈবাৎ দুটো-একটা পুণ্যাত্মা দেখা দেয়, বেশিক্ষণ টিকতে পারে না — আমাদের ঠেলা খেয়ে বনে জঙ্গলে গুহায় তাদের আশ্রয় নিতে হয়।

১ নাগরিক। তা হলে তুমিই দড়াটা ধরে টান দাও না, দাদা, দেখা যাক রথ এগোয় না দড়াটা ছেঁড়ে, না

তুমিই পড় মুখ থুবড়ে।

২নাগরিক। দাদা, আমাদের সঙ্গে পুণ্যাত্মাদের তফাতটা এই যে, গুন্‌তিতে তারা একটা-দুটো, আমরা অনেক। যদি