প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
৪ নাগরিক। ওরে ভাই, দড়িটা মনে হল যেন নড়ে উঠল, কথাবার্তা সামলে বলিস রে।
১ নাগরিক। শাস্ত্রে আছে ব্রাহ্মমুহূর্তে রথের প্রথম টানটা পুরোহিতের হাতে, দ্বিতীয় প্রহরে দ্বিতীয়
টানটা রাজার – সেও তো হয়ে গেল রথ এগোল না — এখন তৃতীয় টানটা কার হাতে পড়বে।
সৈন্যদলের প্রবেশ
১ সৈন্য। বড়ো লজ্জা দিলে রে! স্বয়ং রাজা হাত লাগালে, সঙ্গে সঙ্গে আমরা হাজার জনে ধরে টান দিলুম, চাকার একটু ক্যাঁচকোঁচ শব্দও হল না।
২ সৈন্য। আমরা ক্ষত্রিয়, আমরা তো শূদ্রের মতো গোরু নই — রথ টানা আমাদের কাজ নয়, আমাদের কাজ রথে চড়া।
২ সৈনিক। কিম্বা রথ ভাঙা। ইচ্ছে করছে কুড়ুলখানা নিয়ে রথটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলি। দেখি মহাকাল কেমন ঠেকাতে পারেন।
১ নাগরিক। দাদা, তোমাদের অস্ত্রের জোরে রথ চলবেও না, রথ ভাঙবেও না। গণৎকার কী গুনে বলেছে তা শোন নি বুঝি?
১ সৈনিক। কী বল্ তো।
১ নাগরিক। ত্রেতাযুগে একবার যে কাণ্ড ঘটেছিল, এখন তাই ঘটবে।
১ সৈনিক। আরে, ত্রেতাযুগে তো লঙ্কাকাণ্ড ঘটেছিল।
১ নাগরিক। সে নয়, সে নয়।
২ সৈনিক। কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড?
১ নাগরিক। তারই কাছাকাছি। সেই-যে শূদ্র তপস্যা করতে গিয়েছিল, মহাকাল তাতেই তো সেদিন ক্ষেপে উঠেছিলেন। তার পর রামচন্দ্র শূদ্রের মাথা কেটে তবে বাবাকে শান্ত করেছিলেন।
৩ সৈনিক। আজ তো সে ভয় নেই, আজ ব্রাহ্মণই তপস্যা ছেড়ে দিয়েছে, শূদ্রের তো কথাই নেই।
১ নাগরিক। এখনকার শূদ্রেরা কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে শাস্ত্র পড়তে আরম্ভ করেছে। ধরা পড়লে বলে, আমরা কি মানুষ নই। স্বয়ং কলিযুগ শূদ্রের কানে মন্ত্র দিতে বসেছে যে তারা মানুষ। রথ যে চলে না তাতে মহাকালের দোষ কী — না চললেই ভালো। যদি চলতে শুরু করে তা হলে চন্দ্রসূর্য গুঁড়িয়ে ফেলবে। শূদ্র চোখ রাঙিয়ে বলে কিনা ‘আমরা কি মানুষ নই'। কালে কালে কতই শুনব!
১ সৈনিক। আজ শূদ্র পড়ছে শাস্ত্র, কাল ব্রাহ্মণ ধরবে লাঙল! সর্বনাশ!
২ সৈনিক। তা হলে চল্, ওদের পাড়ায় গিয়ে একবার কষে হাত চালানো যাক। ওরা মানুষ না আমরা
মানুষ, প্রত্যক্ষ দেখিয়ে দিই।
২ নাগরিক। রাজাকে কে গিয়ে বলেছে, কলিযুগে শাস্ত্রও চলে না, অস্ত্রও চলে না, একমাত্র চলে স্বর্ণমুদ্রা। রাজা তাই আমাদের ধনপতি শেঠজিকে তলব করেছেন। ধনপতি টান দিলেই রথ চলবে এইরকম সকলের বিশ্বাস।
১ সৈনিক। বেনের টানে যদি রথ চলে তা হলে আমরা অস্ত্র গলায় বেঁধে জলে ডুবে মরব।