কালের যাত্রা

২ সৈনিক। তা, রাগ করলে চলবে কেন। বেনের টান আজকাল সব জায়গাতেই লেগেছে। এমন-কি, পুস্পধনুর ছিলেটা বেনের টানেই চঞ্চল হয়ে ওঠে। তার তীরগুলো বেনের ঘরেই তৈরি।

৩ সৈনিক। তা সত্যি, আজকাল আমাদের রাজত্বে রাজা থাকেন সামনে, কিন্তু পিছনে থাকে বেনে।

১ সৈনিক। পিছনেই থাকে তো থাক্‌-না — আমরা তো থাকি ডাইনে-বাঁয়ে, মান তো আমাদেরই।

৩ সৈনিক। পাশে যে থাকে তার মান থাকতে পারে, কিন্তু পিছনে যে থাকে ঠেলাটা যে তারই।

 

ধনপতির অনুচরদের প্রবেশ

 

১ সৈনিক। এরা সব কে।

১ সৈনিক। আঙটির হীরে থেকে আলোর উচ্চিংড়েগুলো চোখের উপর লাফ দিয়ে পড়ছে।

৩ সৈনিক। গলায় সোনার হার নয়তো, সোনার শিকল বললেই হয়। কে এরা।

১ নাগরিক। এরাই তো আমাদের ধনপতি শেঠীর দল। ঐ সোনার শিকল দিয়ে এরা মহাকালকে বেঁধে ফেলেছে বলেই তাঁর রথ চলছে না।

১ সৈনিক। তোমরা কী করতে এসেছ।

১ ধনিক। রাজা আমাদের প্রভু ধনপতিকে ডেকে পাঠিয়েছেন। কারো হাতে রথ চলছে না, তাঁর হাতে চলবে বলেই সবাই আশা করে আছে।

২ সৈনিক। সবাই বলতে কে রে বাপু? আর আশাই বা করে কেন।

২ ধনিক। আজকাল যা-কিছু চলছে সবই তো ধনপতির হাতে চলছে।

১ সৈনিক। এখনই দেখিয়ে দিতে পারি তলোয়ার তার হাতে চলে না, আমাদের হাতে চলে।

৩ ধনিক। তোমাদের হাত চালাচ্ছে কে সেটা বুঝি এখনো খবর পাওনি।

১ সৈনিক। চুপ বেয়াদব!

২ ধনিক। আমরা চুপ করব? আজ আমাদেরই আওয়াজ জলে স্থলে আকাশে তা জান?

১ সৈনিক। তোমাদের আওয়াজ? আমাদের শতঘ্নী যখন বজ্রনাদ করে ওঠে —

২ ধনিক। তোমাদের শতঘ্নী বজ্রনাদে আমাদেরই কথা এক ঘাট থেকে আরেক ঘাটে, এক হাট থেকে আরেক হাটে ঘোষণা করবার জন্যে আছে।

১ নাগরিক। দাদা, ওদের সঙ্গে ঝগড়া করে পেরে উঠবে না।

১ সৈনিক। কী বল? পারব না?

১ নাগরিক। না, তোমাদের কোনো তলোয়ার ওদের নিমক খেয়েছে, কোনোটা বা ওদের ঘুষ খেয়েছে, খাপ থেকে বের করতে গেলেই তা বুঝতে পারবে।

১ ধনিক। শুনেছিলেম রথের দড়িতে হাত দেবার জন্যে নর্মদাতীরের বাবাজিকে আজ আনা হয়েছিল। কী হল খবর জান?

২ ধনিক। জানি বৈ কি। যখন এরা গুহায় গিয়ে পৌঁছল, দেখল, প্রভু পদ্মাসনে দুই পা আটকে চিত হয়ে পড়ে আছেন। সাড়াশব্দ নেই। বহুকষ্টে ধ্যান ভাঙানো হল। কিন্তু পা দুখানা আড়ষ্ট কাঠ হয়ে গেছে, চলে না।