প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
১ নাগরিক। শ্রীচরণের দোষ কী। তারা আজ ৬৫ বছরের মধ্যে একবারও চলার নাম করে নি। তা, বাবাজি বললেন কী?
২ ধনিক। বলা-কওয়ার বালাই নেই। চাঞ্চল্যের অপবাদ দিয়ে জিবটাকে একেবারে কেটেই ফেলেছেন। গোঁ গোঁ করতে লাগলেন, তার থেকে যার যে-রকম খেয়াল সে সেই রকমেরই অর্থ করে নিলে।
১ ধনিক। তার পরে?
২ ধনিক। তার পর ধরাধরি করে বাবাজিকে রথতলা পর্যন্ত আনা গেল। কিন্তু যেমনি দড়ি ধরলেন রথের চাকা মাটির মধ্যে বসে যেতে লাগল।
১ধনিক। হা, হা, বাবাজি নিজের মনটাকে যেমন গভীরে ডুবিয়েছেন, মহাকালের রথটাকে সুদ্ধ তেমনি তলিয়ে দিচ্ছিলেন বুঝি?
২ ধনিক। ওঁর পঁয়ষট্টি বৎসরের উপবাসের ভারে চাকা বসে গেল। একদিনের উপবাসের ধাক্কাতেই আমাদের পা চলতে চায় না।
১ নাগরিক। উপবাসের ভারের কথা বলছ, তোমাদের অহংকারের ভারটা বড়ো কম নয়।
২ নাগরিক। সে ভার আপনাকেই আপনি চূর্ণ করে। দেখব আজ তোমাদের ধনপতির মাথা কেমন হেঁট না হয়।
১ ধনিক। আচ্ছা দেখো। বাবা মহাকালের ভোগ জোগায় কে। সে তো আমাদের ধনপতি। যদি বন্ধ করে দেয় তা হলে তাঁর যে চলা না-চলা দুই সমান হয়ে উঠবে। পেট চলা হল সব চলার মূলে।
মন্ত্রী ও ধনপতির প্রবেশ
ধনপতি। মন্ত্রীমশাই, আজ আমাকে ডাক পড়ল কেন।
মন্ত্রী। রাজ্যে যখনই কোনো অনর্থপাত হয় তখনই তো তোমাকেই সর্বাগ্রে ডাক পড়ে।
ধনপতি। অর্থপাতে যার প্রতিকার সম্ভব আমার দ্বারা তার ত্রুটি হয় না। কিন্তু আজকের সংকটটা কী রকমের।
মন্ত্রী। শুনেছ বোধ হয়, মহাকালের রথ আজ কারো হাতের টানেই চলছে না।
ধনপতি। শুনেছি। কিন্তু মন্ত্রী এ-সব কাজ তো এতদিন —
মন্ত্রী। জানি, এতদিন আমাদের পুরোহিত ঠাকুররাই এ-সব কাজ চালিয়েছেন। কিন্তু তখন যে এঁরা স্বাধীন সাধনার জোরে নিজে চলতেন, চালাতেও পারতেন। এখন এঁরা তোমাদেরই দ্বারে অচল হয়ে বাঁধা, এখন এঁদের হাতে কিছুই চলবে না।
ধনপতি। অন্য অন্য বারে রাজা সেনাপতি রাজপারিষদ সকলেই রথের রশিতে হাত লাগাতেন, কখনো তো বাধা ঘটে নি। তখন আমরা তো কেবল চাকায় তেল জুগিয়ে এসেছি, রশিতে টান দিই নি তো।
মন্ত্রী। দেখো শেঠজি, রথযাত্রাটা আমাদের একটা পরীক্ষা। কাদের শক্তিতে সংসারটা সত্যিই চলছে বাবা মহাকালের রথচক্র ঘোরার দ্বারা সেইটেরই প্রমাণ হয়ে থাকে। যখন পুরোহিত ছিলেন নেতা তখন তাঁরা রশি ধরতে না-ধরতে রথটা ঘুমভাঙা সিংহের মতো ধড়ফড় করে নড়ে উঠত। এবারে যে কিছুতেই সাড়া দিল না। তার থেকে প্রমাণ হচ্ছে শাস্ত্রই বল, শাস্ত্রই বল, সমস্ত অর্থহীন হয়ে পড়েছে — অর্থ এখন তোমারই হাতে। সেই তোমার সার্থক হাতটি আজ রথের রশিতে লাগাতে হবে।
ধনপতি। আগে বরঞ্চ আমার দলের লোকে চেষ্টা করে দেখুক, যদি একটুখানি কেঁপেও ওঠে আমিও হাত দেব, নইলে সকল লোকের সামনে —
মন্ত্রী। কেন আর দেরি করা শেঠজি। রাজ্যের সমস্ত লোক উপোস করে আছে, রথ মন্দিরে গিয়ে না পৌছলে কেউ