পরিত্রাণ

বিভা। সে কথা তাঁরা ভুলতে পারেন নি। এবার এসে ঠাট্টায় জিততে পণ করে ওঁর রমাই ভাঁড়কে মেয়ে সাজিয়ে বাড়ির মধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন-মাকে কী-একটা যা-তা বলেছে।

উদয়। সর্বনাশ!

বিভা। আমি তাকে দেখেই চিনতে পেরেছিলুম-মোহন মালকে বলে তখনই তাকে বিদায় করে দিয়েছি। কিন্তু কী জানি যদি কেউ বুঝতে পেরে থাকে!

উদয়। তোমার কি মনে হয় মা টের পেয়েছিলেন?

বিভা। হতেও পারে মা হয়তো টের পেয়েছেন, কিন্তু অপমানটা পাছে ছড়িয়ে পড়ে, তাই চুপ করে গেলেন।

উদয়। মা কখনো এত বড়ো সর্বনেশে কথাটা বাবাকে বলবেন না।

বিভা। তা বলবেন না, কিন্তু কেমন করে বুঝব আর কেউ জেনেছে কি না।

সুরমা। বিভা, ভয় পাস নে, নিশ্চয় কেউ টের পায় নি। পেলে এতক্ষণ আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠত।

উদয়। ব্যাপারটা তো কাল হয়ে গেছে?

বিভা। হাঁ।

উদয়। তা হলে আমি বলে দিচ্ছি ফাঁড়া কেটে গেছে। বিচার করতে মহারাজের এক মুহূর্ত বিলম্ব হয় না। খবর পেলে কালকের রাতটা কাটত না। তবু এক কাজ কর্, বিভা তুই এখনই যা। রামচন্দ্রকে বল্‌, এ বাড়ি থেকে চলে যেতে, যেন কিছুমাত্র বিলম্ব না করেন।

বিভা। তুমি বলো-না দাদা, আমার কথা যদি না শোনেন।

উদয়। না, আমি তাকে যেতে বললে সে অপমান বোধ করবে।

[ বিভার প্রস্থান

সুরমা। রাজা হলেই কি মানুষ নিজের খেয়াল ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না?

উদয়। সামান্য একটা মেয়েলি ঠাট্টার হার-জিতের কথা এই যশোরের রাজবাড়িতে স্বপ্নেও ভাবতে পারে, এত বড়ো নির্বোধ! এখানেও খেয়ালের রাজত্ব বটে, কিন্তু কত-বড়ো সব খেয়াল- বিধির লিখনকে মুছে ফেলে রক্তের অক্ষরে নতুন লিখন বসিয়ে দেওয়ার খেয়াল।

বসন্তরায়ের প্রবেশ

উদয়। একি, দাদামশায় যে! স্বপ্ন? না মতিভ্রম?

বসন্ত।-

গান

আজ তোমারে দেখতে এলেম

অনেক দিনের পরে।

ভয় কিছু নেই, সুখে থাকো,

অধিক ক্ষণ থাকব নাকো-

এসেছি এক নিমেষের তরে।