পরিত্রাণ

দেখব শুধু মুখখানি,

শুনব দুটি মধুর বাণী,

আড়াল থেকে হাসি দেখে

চলে যাব দেশান্তরে।

সুরমা। দাদামশায়, কারো মুখে হাসি দেখবার জন্যে তোমাকে কোনোদিন আড়ালে থাকতে হয় নি।

উদয়। তুমি যাই বল, হাসি দেখে দেশান্তরে যেতে ইচ্ছে হয় এমন হাসি আমরা কেউ হাসি নে।

সুরমা। তুমি যে এলে আমরা কোনো খবর জানতুম না।

বসন্ত। দিদি, এ সংসারে প্রত্যক্ষ এসে না পৌঁছলে, কে আসবে কে না আসবে তার ঠিক খবরটি তো পাওয়া যায় না।

সুরমা। ওটা শঙ্করাচার্যের মতো কথা হল। তোমার ওই হাসিমুখে এমন কথা মানায় না।

বসন্ত। সে কথা মিথ্যে বলিস নি ভাই। সংসার অনিত্য, জীবন অনিশ্চিত, এ-সব কথা ঘোর মিথ্যে। তোদের মুখ যখনই দেখি তখনই সংসার নিত্য, তখনই জীবন চিরদিনের, তা যেদিন মরি আর যেদিন বাঁচি।

সুরমা। যে অমৃত-মুখের কথা বললে সেটিকে তোমার তৃষিত চক্ষু খুঁজে বেড়াচ্ছে, আমি কি বুঝতে পারছি নে?

বসন্ত। ওটা, ভাই, মিথ্যে অভিমানের কথা বললি, মহাদেব বুকের মধ্যে রেখেছেন অন্নপূর্ণাকে, আর মাথার উপরে রেখেছেন গঙ্গাকে-কাউকেই তাঁর ছাড়লে একদণ্ড চলে না। - তাঁর প্রাণের অন্নজল দুইই সমান চাই।

সুরমা। আর আমার ঠাক্‌রুনদিদি! এখানে এসেই বুঝি ভুললে?

বসন্ত। তিনি তো আমার চাঁদ। বিধাতা আমার কপালে লিখে দিয়েছেন। তাঁকে ভুলেও ভোলবার জো নেই।

সুরমা। তিনি চাঁদের মতোই চুপ করে থাকেন বটে, আমি বোধ হয় গঙ্গার মতোই মুখরা।

বসন্ত। সে কথা অস্বীকার করতে পারি নে। চক্ষু বুজে ওই স্নিগ্ধ কলকণ্ঠ নিয়তই মনে মনে শুনতে পাই।

সুরমা। এত স্তুতিবাক্যও চতুর্মুখ তোমার এক মুখে জোগান কী করে?

বসন্ত। সে আমার এই বাগ্‌বাদিনীর গুণে-বিধিরও নয়, আমারও নয়।

সুরমা। আর নয় দাদামশায়, মিষ্টির পরিমাণটা একলার পক্ষে কিছু বেশি হয়ে উঠেছে।

বিভার দ্রুত প্রবেশ

 

বসন্ত। বিভা! কী হয়েছে দিদি, তোমার মুখ অমন কেন?

বিভা। মহারাজের কানে গিয়েছে।

উদয়। কী সর্বনাশ! কেমন করে গেল? মা কিছু বলেছেন না কি?

বিভা। না, মা বলেন নি। ওঁরা নিজেই থাকতে পারেন নি। এই নিয়ে আমাদের রাজবাড়ির লোকদের কাছে বড়াই করতে গিয়েছেন-তার থেকেই রাষ্ট্র হয়েছে।

বসন্ত। কী হয়েছে ব্যাপারটা?

উদয়। রামচন্দ্র ছেলেমানুষি করে অন্তঃপুরে তার ভাঁড়কে পাঠিয়েছিল মেয়ে সাজিয়ে। সে কথা মহারাজের কানে উঠেছে,