চিরকুমার-সভা

শ্রীশ। এবং যা - কিছু ভালো লাগবার মতো জিনিস সবই ভালো লাগে।

বিপিন। বিধাতা তো তোমাকে ভারি আশ্চর্য রকম ছাঁচে গড়েছেন দেখছি।

শ্রীশ। তোমার ছাঁচ আরো আশ্চর্য। তোমার লাগে ভালো, কিন্তু বল অন্যরকম — আমার সেই শোবার ঘরের ঘড়িটার মতো — সে চলে ঠিক, বাজে ভুল।

বিপিন। কিন্তু শ্রীশ, তোমার যদি সব মনোরম জিনিসই মনোহর লাগতে লাগল তা হলে তো আসন্ন বিপদ।

শ্রীশ। আমি তো কিছুই বিপদ বোধ করি নে।

বিপিন। সেই লক্ষণটাই তো সব চেয়ে খারাপ। রোগের যখন বেদনাবোধ চলে যায় তখন আর চিকিৎসার রাস্তা থাকে না। আমি ভাই, স্পষ্টই কবুল করছি, স্ত্রীজাতির একটা আকর্ষণ আছে — চিরকুমার - সভা যদি সেই আকর্ষণ এড়াতে চান তা হলে তাঁকে খুব তফাত দিয়ে যেতে হবে।

শ্রীশ। ভুল, ভুল, ভয়ানক ভুল। তুমি তফাতে থাকলে কী হবে, তাঁরা তো তফাতে থাকেন না। সংসাররক্ষার জন্যে বিধাতাকে এত নারী সৃষ্টি করতে হয়েছে যে তাঁদের এড়িয়ে চলা অসম্ভব। অতএব কৌমার্য যদি রক্ষা করতে চাও তা হলে নারীজাতিকে অল্পে অল্পে সইয়ে নিতে হবে। ঐ - যে স্ত্রীসভ্য নেবার নিয়ম হয়েছে, এতদিন পরে কুমার - সভা চিরস্থায়ী হবার উপায় অবলম্বন করেছে। কিন্তু, কেবল একটিমাত্র মহিলা হলে চলবে না বিপিন, অনেকগুলি স্ত্রীসভ্য চাই। বদ্ধ ঘরের একটি জানলা খুলে ঠাণ্ডা লাগালে সর্দি ধরে, খোলা হাওয়ায় থাকলে সে বিপদ নেই।

বিপিন। আমি তোমার ঐ খোলা - হাওয়া বদ্ধ - হাওয়া বুঝি নে ভাই। যার সর্দির ধাত তাকে সর্দি থেকে রক্ষা করতে দেবতা মনুষ্য কেউ পারে না।

শ্রীশ। তোমার ধাত কী বলছে হে।

বিপিন। সে কথা খোলসা করে বললেই বুঝতে পারবে তোমার ধাতের সঙ্গে তার চমৎকার মিল আছে। নাড়িটা যে সব সময়ে ঠিক চিরকুমারের নাড়ির মতো চলে তা জাঁক করে বলতে পারব না।

শ্রীশ। ঐটে তোমার আর - একটা ভুল। চিরকুমারের নাড়ির উপরে ঊনপঞ্চাশ পবনের নৃত্য হতে দাও — কোনো ভয় নেই, বাঁধাবাঁধি চাপাচাপি কোরো না। আমাদের মতো ব্রত যাদের তারা কি হৃদয়টিকে তুলো দিয়ে মুড়ে রাখতে পারে। তাকে অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার মতো ছেড়ে দাও, যে তাকে বাঁধবে তার সঙ্গে লড়াই করো।

বিপিন। ও কে হে। পূর্ণ দেখছি। ও বেচারার এ গলি থেকে আর বেরোবার জো নেই। ঐ বীরপুরুষের অশ্বমেধের ঘোড়াটি বেজায় খোঁড়াচ্ছে। ওকে একবার ডাক দেব?

শ্রীশ। ডাকো। ও কিন্তু আমাদেরই দুজনকে অন্বেষণ করে গলিতে গলিতে ঘুরছে বলে বোধ হচ্ছে না।

বিপিন। পূর্ণবাবু, খবর কী।


পূর্ণর প্রবেশ

পূর্ণ। অত্যন্ত পুরোনো। কাল - পরশু যে খবর চলছিল আজও তাই চলছে।

শ্রীশ। কাল - পরশু শীতের হাওয়া বচ্ছিল, আজ বসন্তের হাওয়া দিয়েছে — এতে দুটো - একটা নতুন খবরের আশা করা যেতে পারে।

পূর্ণ। দক্ষিণের হাওয়ায় যে - সব খবরের সৃষ্টি হয় কুমার - সভার খবরের কাগজে তার স্থান নেই। তপোবনে একদিন