চিরকুমার-সভা
অকালে বসন্তের হাওয়া দিয়েছিল, তাই নিয়ে কালিদাসের কুমারসম্ভব কাব্য রচনা হয়েছে — আমাদের কপালগুণে বসন্তের হাওয়ায় কুমার - অসম্ভব কাব্য হয়ে দাঁড়ায়।

বিপিন। হয় তো হোক - না পূর্ণবাবু — সে কাব্যে যে দেবতা দগ্ধ হয়েছিলেন এ কাব্যে তাঁকে পুনর্জীবন দেওয়া যাক।

পূর্ণ। এ কাব্যে চিরকুমার - সভা দগ্ধ হোক। যে দেবতা জ্বলেছিলেন তিনি জ্বালান। না, আমি ঠাট্টা করছি নে শ্রীশবাবু, আমাদের চিরকুমার - সভাটি একটি আস্ত জতুগৃহবিশেষ। আগুন লাগলে রক্ষে নেই। তার চেয়ে বিবাহিত সভা স্থাপন করো, স্ত্রীজাতি সম্বন্ধে নিরাপদ থাকবে। যে ইঁট পাঁজায় পুড়েছে তা দিয়ে ঘর তৈরি করলে আর পোড়বার ভয় থাকে না হে।

শ্রীশ। যে-সে লোক বিবাহ ক'রে বিবাহ জিনিসটা মাটি হয়ে গেছে পূর্ণবাবু। সেইজন্যেই তো কুমার - সভা। আমার যতদিন প্রাণ আছে ততদিন এ সভায় প্রজাপতির প্রবেশ নিষেধ।

বিপিন। পঞ্চশর?

শ্রীশ। আসুন তিনি। একবার তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেলে, বাস্‌, আর ভয় নেই।

পূর্ণ। দেখো শ্রীশবাবু —

শ্রীশ। দেখব আর কী। তাঁকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এক চোট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলব, কবিতা আওড়াব, কনকবলয়ভ্রংসরিক্তপ্রকোষ্ঠ হয়ে যাব, তবে রীতিমত সন্ন্যাসী হতে পারব। আমাদের কবি লিখেছেন —


নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া,

তোমার অনল দিয়া।

কবে যাবে তুমি সমুখের পথে

দীপ্ত শিখাটি বাহি

    আছি তাই পথ চাহি।

পুড়িবে বলিয়া রয়েছে আশায়

আমার নীরব হিয়া

  আপন আঁধার নিয়া।

নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

   জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া,

পূর্ণ। ওহে শ্রীশবাবু, তোমার কবিটি তো মন্দ লেখে নি —

নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ

   জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া,

ঘরটি সাজানো রয়েছে — থালায় মালা, পালঙ্কে পুষ্পশয্যা, কেবল জীবনপ্রদীপটি জ্বলছে না, সন্ধ্যা ক্রমে রাত্রি হতে চলল। বাঃ, দিব্যি লিখেছে। কোন্‌ বইটাতে আছে বলো দেখি।

শ্রীশ। বইটার নাম ‘আবাহন'।

পূর্ণ। নামটাও বেছে বেছে দিয়েছে ভালো। ( আপন মনে ) —